করোনাভাইরাস কি বায়ুবাহিত? এই বিতর্কের সমাধান হতে না হতেই নয়া আতঙ্কের কথা শোনালেন বিশেষজ্ঞেরা। গবেষকদের নয়া সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দুয়ার বন্ধ করেও আর নিস্তার নেই। সবার অজান্তে ছোবল মারতে পারে অদৃশ্য ভাইরাস। এবং আক্রমণের আশঙ্কা বেশি ঘরেই। অর্থাৎ, রাস্তাঘাটে অপরিচিত ব্যক্তিদের থেকে সংক্রমণ হতেই পারে। কিন্তু বাড়ির অন্দরে আক্রান্ত সদস্যদের থেকে ভাইরাস হানার আশঙ্কা অনেক বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়ার একদল মহামারী বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণের এই রিপোর্ট সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র তরফে প্রকাশ করা হয়েছে।
কীভাবে গোটা প্রকল্পের কাজ চালানো হলো? গবেষকদের জবাব, মূলত দু’টি পৃথক দলের উপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। প্রথম দলে রয়েছেন ৫ হাজার ৭০৬ জন প্রাথমিক আক্রান্ত বা ‘ইনডেক্স পেশেন্ট’। অন্যদিকে তাদের সংস্পর্শে আসা প্রায় ৫৯ হাজার রোগীকে দ্বিতীয় দলে রাখা হয়েছে। এরপর আক্রান্তদের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য একত্রিত করে তারা দেখেছেন, পরিবারের সদস্যদের থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অপরিচিতদের তুলনায় অনেকটা বেশি। পরিসংখ্যান ধরে তারা জানিয়েছেন, প্রতি ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে যেখানে মাত্র দু’জন রাস্তাঘাটের অপরিচিতদের থেকে সংক্রামিত হয়েছেন, সেখানে ঘরের মধ্যে সংক্রমণের এই অনুপাত প্রতি ১০০ জনে ১০ জন। অর্থাৎ, ১০ জন রোগীর মধ্যে একজন কোনো না কোনোভাবে বাড়ির কোনো কোভিড আক্রান্ত সদস্যের সংস্পর্শে এসেছেন।
আতঙ্কের এই খতিয়ান পেশ করার পাশাপাশি আর একটি বিষয় গবেষকেরা নজরে এনেছেন। তাদের মতে, পরিবারের যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা প্রাথমিকভাবে কোভিড আক্রান্ত হলে সংক্রমণের মাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়। এর পেছনে তারা অবশ্য যুক্তি খাড়া করেছেন। সমীক্ষক দলের সদস্য জিওং ইয়ুন-কিয়ং-এর দাবি, এই দু’টি নির্দিষ্ট বয়সের সদস্যরা কোনোভাবে অসুস্থ হলে পরিবারের বাকিরা অতিরিক্ত মনোযোগ ও যত্ন নিয়ে শুশ্রূষা চালান। এতে শারীরিক দূরত্বের নিয়ম আর বজায় থাকে না। ফলে বাকি পরিজনরা দ্রুত আক্রান্ত হতে থাকেন।
এত দুশ্চিন্তার মধ্যেও অবশ্য একটি আশার কথা বলা হয়েছে। সেটা শিশুদের নিয়ে। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ৯ বছরের নিচের শিশুদের প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কম। ফলে ভাইরাসের বাহক হিসেবে তাদের ভূমিকা তেমন নেই বললেই চলে। যদিও এ বিষয়ে এখনও শেষ সিদ্ধান্ত জানাতে নারাজ গবেষকদের একাংশ। দলের অন্যতম পরিদর্শক চো ইয়ং-জুনের মতে, শিশুদের নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য তাদের হাতে আসেনি। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তাছাড়া আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশই উপসর্গহীন। আপাতত প্রাপ্ত ফলাফল এক অর্থে অসম্পূর্ণ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন