চীন থেকে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সময়ে অনেক গুজব ছড়িয়েছে। গরম পানি থেকে শুরু করে ভিটামিন সি গ্রহণের কথা শোনা গেছে। আসলে কি এসবে করোনাভাইরাস দূরে থাকে?
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) চিকিৎসক ডা. আমির খান আল-জাজিরায় ‘ডক্টরস নোট’ কলামে জানিয়েছেন, এই সব তথ্যের অধিকাংশ গুজব। কিভাবে কী করলে ভাইরাস দূরে থাকতে পারে, সে বিষয়ে নিজের কলামে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।
বাইরে থেকে ফিরে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে। না ধুয়ে কোনোভাবেই চোখে-মুখে হাত দেয়া যাবে না। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। সতর্কতার সঙ্গে সেটি ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ হাত দূরে থাকতে হবে।
আমির খান লিখেছেন, ‘এগুলো প্রাথমিক সতর্কতা। একটা কথা পরিষ্কার করে বলা দরকার কোনো উপাদানেই আসলেই কোনো রোগ সারে না। নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়ার পর আপনি মুক্তি পেতে পারেন। ’
গত মাসে চীনের একটি জার্নালে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ রোগীদের মুখের বদলে শিরায় ১০ হাজার এমজি থেকে ২০ হাজার এমজি ভিটামিন সি সাত থেকে দশ দিন দেয়া হয়েছে।
আমির বলছেন, ‘ভিটামিন সি আসলে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রভাবের কারণে পরিচিত। শারীরিক সুস্থতার ভারসাম্য রক্ষা করে এটি।’
‘ভাইরাল ইনফেকশনের আগে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে এর তীব্রতা কম থাকে। ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য এর শক্ত কোনো প্রমাণ নেই।’
ভিটামিন সিয়ের প্রধান উৎস ফল। যেমন: কমলা এবং লেবু। একই সঙ্গে গাড় সবুজ শাকসবজি যেমন ব্রকলিতেও ভিটামিন সি থাকে।
নতুন করোনাভাইরাস থেকে প্রতিরোধের উপায় হিসেবে অনেকে গরম পানিতে গোসলের কথা বলছেন। গরম পানিতে গোসলের মাধ্যমে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে না। কারণ, বাইরের তাপমাত্রা যা-ই হোক না কেন, মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৭-৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে। মনে রাখবেন, কভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে একটু পরপরই সাবান-পানি বা অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা। এর মাধ্যমেই আপনার হাতে থাকা জীবাণু অপসারিত হবে। একই সঙ্গে হাত দিয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি পোস্ট ছড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, প্রতি ১৫ মিনিট পরপর পানি পান করুন। এতে গলার মধ্যে থাকা ভাইরাস পাকস্থলীতে চলে যাবে। পাকস্থলীতে থাকা অ্যাসিড ভাইরাস মেরে ফেলবে।
আমির বলছেন, যদি কারও মুখ ব্যবহার করে ভাইরাস কাউকে আক্রান্ত করে, তাহলে তা দু–একটি নয়, লাখ লাখ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। পানি পান করার সময় সামান্য পরিমাণ ভাইরাসই পাকস্থলীতে যাবে। তা ছাড়া শুধু মুখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে না। চোখ ও নাকের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে ঘন ঘন পানি পান করে করোনা আটকানো যাবে ন। এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের ৫০ শতাংশই মুখ, নাক, চোখ থেকে সংক্রমিত হয়েছে।
তাই বলে পানি পান আবার বন্ধ করা যাবে না। পানি এমন একটি পদার্থ যা নিয়মিত বিরতিতে সারা দিন খেতে থাকলেও সমস্যা হয় না। বরং শরীরের সার্বিক প্রক্রিয়া ঠিক থাকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন