বর্তমান বিশ্বে গ্লুকোমা অন্ধত্বের প্রধান কারণ। এতে চোখের অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে যায়। সময় যত যায়, এটা তত মারাত্মক অন্ধত্বের দিকে রূপ নেয়। গ্লুকোমায় চোখের প্রেসারজনিত কারণে অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়। তবে স্বাভাবিক প্রেসারেও অনেক সময় নষ্ট হতে পারে, যা নীরবে অন্ধত্বের দিকে ধাবিত করে। এটি নষ্ট হয়ে গেলে বাইরের জগতের কোনো দৃশ্যমান বস্তুর ছবি (ইমেজ) মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না। তখন আমরা তাকে অন্ধ বলে থাকি।
এ রোগে একবার দৃষ্টিশক্তি হারালে কোনও দিন আর ফিরে আসে না। এটা পরিবার থেকেও বংশানুক্রমে দেখা দিতে পারে। সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, গ্লুকোমা আক্রান্তের ভাইবোনরা আক্রান্ত হয় ১০ শতাংশ আর সন্তানরা আক্রান্ত হয় ৪ শতাংশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় কোনো ব্যথা বা রোগের লক্ষণ, উপসর্গ থাকে না। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেই প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। তখন তিনি গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাবেন।
যেহেতু এ রোগে দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে না, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, দৃষ্টিশক্তি যা আছে, তা সংরক্ষণ করা যায়। সে জন্য চোখের প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখা একমাত্র উপায়। নিয়মিত চোখের পরীক্ষা, চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে আজীবন অন্ধমুক্ত থাকা সম্ভব। গ্লুকোমা দুই প্রকার। জন্মগত গ্লুকোমা ও অর্জিত গ্লুকোমা। প্রাইমারি গ্লুকোমায় কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না; ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমায় প্রাথমিক অবস্থায় কোনও উপসর্গ বা লক্ষণ পাওয়া যায় না। কিন্তু অ্যাঙ্গেল ক্লোজারে সাধারণত উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে। সময়মতো লেজার চিকিৎসা করালে অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লুকোমা থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকা সম্ভব। ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমায় নিয়মিত গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে অন্ধত্ব প্রতিকার সম্ভব।
সেকেন্ডারি গ্লুকোমার কারণগুলো হলো-ছানি, ডায়াবেটিস, আঘাতজনিত, প্রদাহজনিত এবং স্টেরইয়েড ব্যবহার। এ ছাড়া নরমাল টেনশন গ্লুকোমা নামে এক ধরনের ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা আছে, যাতে চোখের প্রেসার নরমাল থাকা অবস্থায়ও রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
উপসর্গ ও লক্ষণ : ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমায় সাধারণত লক্ষণ ও উপসর্গ পাওয়া যায় না। তবে অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লুকোমায় উপসর্গ ও লক্ষণ তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় এবং দৃষ্টি খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে তা লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। উপসর্গ হলো-বর্ণবলয়; চোখে ঝাপসা দেখা ও কম দেখা; চোখের মনির চারপাশে লাল হয়ে যাওয়া’ চোখ ফোলা; চোখ, কপাল, ও মাথা ব্যথা; বমি বমি ভাব, বমি করা।
প্রতিকার : নিয়মিত চোখ পরীক্ষা। চল্লিশোর্ধ্ব সবার গ্লুকোমা স্ক্রিনিং করা। চোখের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চোখে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার না করা। চোখ যেন আঘাত না পায়। চোখ লাল হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গ্লুকোমা বিভাগ
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার বিশেষজ্ঞ
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
চেম্বার : কনসালট্যান্ট, গ্রিন আই
হাসপাতাল, ধানম-ি, ঢাকা
০১৭৭০৪০৮০৬০, ০১৬৩৬৪৪৪৩৩৩
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন