আজ দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া। ছবি: আমাদের সময়
শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণায় বাধা, হুমকি ও মারধরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া বলেন, ‘শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ইকবাল হোসেন অপু, তার সমর্থিত ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান আকন্দ উজ্জ্বল ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা মারধর, হুমকি-ধমকি ও প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। এমপি ইকবাল হোসেন অপু আমার কাছে ৫ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। আমি গরিব মানুষ, টাকা দিতে পারি নাই বলে তিনি আমার বিরুদ্ধে নেমেছেন। আমার ও আমার পরিবারের কিছু হলে এমপি ইকবাল হোসেন অপু দায়ী থাকবেন।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী আরও বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আজ আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে। আমরা আজ ঘর থেকে বের হতে পারছি না। এমপি তার চিহ্নিত ক্যাডার বাহিনী আমার ও আমার পরিবারের দিকে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমার ভাইদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমার কোনো কর্মী-সমর্থক প্রচার-প্রচারণায় গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।’
বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া বলেন, ‘শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রকাশ্যে তার পছন্দের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তিনি তাদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপির নির্দেশে তার স্ত্রী, ছেলে, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জ্বল আকনের ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ও আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী হামলায় আমার একাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন।’
দিপু মিয়া বলেন, ‘এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি পুলিশ সুপার, পালং মডেল থানার ওসি, জেলা নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি।’
প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।
আবার প্রচারে বাধা দেওয়া হলে, কর্মীদের হুমকি-ধমকি ও মারধর করা হলে প্রয়োজনে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দেন দিপু মিয়া। আমরণ অনশন করবেন, তবুও নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে যাবেন না বলে জানান।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই ও ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান আকন্দ উজ্জ্বল বলেন, ‘বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়াকে বাধা দিয়েছি, এমন প্রমাণ থাকলে মামলা মোকদ্দমা করুক। তার এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’
শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ‘চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়ার প্রচারে বাধা, কর্মীদের মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে প্রমাণ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কোনো এমপির স্বজনরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এতে করে আমার চাচাতো ভাই দিপু মিয়াকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করেছিলাম। তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ অমান্য করে এবং আমার কোনো সমর্থন না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সহধর্মিনী, আমার একমাত্র ছেলেসহ আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য আমি তীব্র নিন্দা জানাই।’ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়ার অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন