সিলেটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই লড়ছেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী একাধিক নেতা একাধিক উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। তারা একে অন্যকে ঘায়েল করতে মরিয়া। এ কারণে দলের নেতা কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতাদের বহিষ্কার করেছে সংগঠনের হাই কমান্ড। তবে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতারা নির্বাচনি মাঠ ছাড়ছেন না। তারা যেকোনো মূল্যে নির্বাচনি ফসল ঘরে তুলতে বদ্ধপরিকর। চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বহিষ্কৃত প্রার্থীরা বলেন, সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও তারা দল ছাড়বেন না। সংগঠনের কর্মী হয়েও তারা থাকবেন।
চার ধাপে সিলেটের ৩৭টি উপজেলায় এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অধিকাংশ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রার্থীর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। হাতেগোনা কয়েকটি উপজেলায় বিএনপি ও স্বতন্ত্ররা প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় নির্দেশনা মেনে ভোটের মাঠে নেই জামায়াতের নেতারা। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে সিলেটের ১১টি উপজেলায় আগামী ৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিলেটের চার উপজেলায় ২৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনই আওয়ামী লীগের। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সদর উপজেলায় প্রার্থী হননি বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। কিন্তু ছয় প্রার্থীর চারজনই ক্ষমতাসীন দলের। শ্রমিক লীগ সিলেট জেলা সভাপতি এজাজুল হক মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তাকে টেক্কা দিতে আওয়ামী লীগ নেতা সুজাত আলী রফিক, সামসুল ইসলাম ও মিল্লাত আহমদ চৌধুরী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। অন্য দুজনের মধ্যে ডা. খলিলুর রহমান ও আহাদ মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী। গোলাপগঞ্জে তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ ও ব্রাজিল যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু জাহিদ নির্বাচন করছেন না। তবে তার ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা মোগলাবাজার ইউনিয়নের দুইবারের চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা ফখরুল ইসলাম সায়েস্তা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তার পক্ষে আবু জাহিদও মাঠে কাজ করছেন। লড়াই হবে আওয়ামী লীগ নেতা বদরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শামীম আহমদ, তেতলী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ জুয়েল আহমদের মধ্যে। এ ছাড়া আঞ্চলিক নাট্যকর্মী সাহেদ মোশারফও মাঠে রয়েছেন।
বিশ্বনাথ উপজেলায় ১০ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। যুক্তরাজ্যের ডরসেট আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল রোশন চেরাগ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকদ্দুছ আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা শমসাদুর রহমান রাহিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ এস আলী এনামুল হক, জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন প্রচারণায় রয়েছেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, যে যার মতো প্রার্থী হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হবে।
অপরদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৯ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কৃতদের মধ্যে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচজন রয়েছেন। শুক্রবার বিকালে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বহিষ্কৃতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বহিষ্কারাদেশের বিবৃতিতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সিলেটে বহিষ্কৃত নেতারা হলেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রব, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ কাওছার খান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না বেগম। তারা জানান, দলের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তারা সংবাদমাধ্যমে জেনেছেন। তবে কেউই দলের পক্ষ থেকে লিখিত কিছু পাননি।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপ মিয়া, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেন্দ্র চন্দ্র দাস। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি ও দিরাই উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ছবি চৌধুরী ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রাহেলা বেগমকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন