শেখ হাসিনার দু:শাসনে প্রধান টার্গেট সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঘোষিত মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে তাঁকে বাধা দিতে বালুর ট্রাকে চাপা দেওয়া হয়েছিল গণতন্ত্রকে। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন, এজন্য গেইটের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল বালুর ট্রাক। এই বালুর ট্রাকে চাপাপড়া গণতন্ত্র আজো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের আগেই বিনা ভোটে ১৫৪জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনে ভোটেরই দরকার হয়নি। তবে ৫ জানুয়ারির এই একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে বিরোধী দলীয় ২৯ ডিসেম্বর ডাক দিয়েছিল মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষদের নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমবেত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
এই কর্মসূচির দুইদিন আগে থেকেই গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার সামনে বালুভর্তি ট্রাক দাড় করিয়ে দু:শাসনের নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন শেখ হাসিনা। এনিয়ে তখন দেশবিদেশে তুমুল আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
টানা প্রায় ৩৫০ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শেষে ২০১৩ সালের ২৪শে ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বেগম খালেদা জিয়া। এই সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি প্রতিহত করে শেখ হাসিনার দু:শাসন অব্যাহত রাখার জন্য রাষ্ট্রের সব শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলোর সাথে অস্ত্র হাতে মাঠে নামে আওয়ামী গুণ্ডাপাণ্ডারা।
বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের 'ফিরোজা' ভবনের গেইটে বালুর ট্রাক দিয়ে পথ রুদ্ধ করা হয়। সশস্ত্র অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৭শে ডিসেম্বর থেকে ১১ই জানুয়ারি। দীর্ঘ ১৫ দিন গুলশানের কূটনৈতিক এলাকার নিজ বাসভবনে আটকে রাখা হয়েছিল বিরোধী দলীয় নেত্রীকে। বালুর ট্রাকে অবরুদ্ধ ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া। এতে ২০১৩ সালের ২৭শে ডিসেম্বর রাত থেকে রীতিমতো নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এমনকি তার আত্মীয়-স্বজনদেরও সে বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেই জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে রওয়ানা দিতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। তখন বাসভবনের গেটেই তাকে আটকে দেয় পুলিশ। তখন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে বিরোধী নেতার অবরুদ্ধ বাসভবনের চিত্র ফলাও প্রচারিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও।
‘বাংলাদেশী গণতন্ত্রের নমুনা ৭৯ গুলশান’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে লন্ডনের বিখ্যাত ও অটলান্টিকের উভয় পাড়ে সর্বজন সমাদৃত ‘দি ইকোনমিস্ট’। এতে উঠে এসেছিল শেখ হাসিনার দু:শাসনে গণতন্ত্রকে বালুর ট্রাকে চাপা দেওয়ার সচিত্র বর্ণনা।
বেগম খালেদা জিয়া চলমান অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে শেখ হাসিনা তখন স্বস্তির নি:শ্বাস নিয়েছিলেন। বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের ফলে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল রাজধানী। বেগম জিয়া অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে স্বাভাবিক হতে থাকে দেশ। শেখ হাসিনাও তাঁর নীলনকশা অনুযায়ী বিরোধী দল দমনে শুরু করে তাঁর দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি।
বালুর ট্রাক’ সংস্কৃতি থেমে ছিলো না। এক বছর পরই আবারো ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ ঘোষণা করে আবারো অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এই কর্মসূচির আগেই গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। ২০ দলীয় জোট ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশে কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। বিরোধী জোটের ডাকা সেদিনের সমাবেশ ঠেকাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগের বছরের মতই গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আটকে দেওয়া হয় বালুর ট্রাক দিয়ে। বালু, খোয়া ও ইটভর্তি ১৩টি ট্রাক, পুলিশের জলকামান, প্রিজন ভ্যান, অসংখ্য পিকআপ, ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিল পুলিশ। সেদিনও গুলশানের ৮৬ ও ৯০ নম্বর সড়কের দুই দিকে আড়াআড়িভাবে ১৩টি ট্রাক দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়কে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন