ফেনীর সোনাগাজীতে সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী হৃদয় (২২) নামে ছাত্রলীগ নেতার পায়ের রগ কেটে দেওয়ার ঘটনায় আহত সেই ছাত্রলীগ নেতাকে প্রধান আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন প্রতিপক্ষ ।
সোমবার (২৭ মার্চ) উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরডুব্বা গ্রামের কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১১জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় আহত অপর যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনকেও একই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. হৃদয়, ছাত্রলীগ নেতা মো. সাইমুন, যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন, মো. তামিন, মো. সাগর, মো. ইমন, মো. সাহেদ, তাওহীদ, মো. সিয়াম, আ.লীগনেতা মেজবাহ উদ্দিন ওরফে বারিস্টার, এমরান ও অজ্ঞাত ৫-৬ জন।
এজাহারে বলা হয়েছে, তার স্কুলপড়ুয়া ছেলে আইন উদ্দিনের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা হৃদয়ের পূর্ববিরোধের জেরে ২৫ মার্চ রাত ৮টার দিকে তার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় আসামিরা হামলা করে। এসময়তার আত্মীয় ফয়েজ উল্যাহ ও তার ছেলে আইন উদ্দিন আহত হয়।
অপরদিকে আহত ছাত্রলীগ নেতা হৃদয়ের পরিবার ও দলীয় নেতাদের দাবি, এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে চরডুব্বা গ্রামের শফি উল্যাহর ছেলে যুবলীগকর্মী আরিফ হোসেন ও সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০-২২ জন নেতাকর্মী দলবদ্ধ হয়ে ইফরান হোসেন নামে এক দোকান কর্মচারীর ওপর হামলার উদ্দেশ্যে তেড়ে যায়। এ সময় যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন তারাবির নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় হামলাকারীদের সামনে পড়ে তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় যুবলীগ কর্মীরা মোশরফের ওপর হামলা চালায়। তার সাথে থাকা আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়ের ওপরও হামলা চালিয়ে পায়ের রগ কেটে দেয়। হৃদয়ের চিৎকারে তার ছোট ভাই নয়ন এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে-কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়।
আহত ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় ও তার ছোট ভাই নয়ন চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের ভাই সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন আরিফ হোসেন, তার ভাই সাইফুল ইসলাম, নেজাম উদ্দিন মাস্টার, মো. নাঈম, রিফাত, অন্তর, আরাফাত, মেজবাহ, রাহাত, মো. আরমান, আমজাদ হোসেন, মো. হায়দার, মো. মিরাজ ও অজ্ঞাত ৮-১০জন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির বলেন, ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় গুরতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে পাল্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। হামলাকারীরা চরডুব্বা ও চরএলাহি থেকে দলবদ্ধ হয়ে মধ্যম আহম্মদপুরের বাঁশতলায় গিয়ে হামলা করেছে।কিন্তু পাল্টা মামলায় আহতদেরকে আসামি করা ঠিক হয়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন ভূঞা সাইমুন ছা বলেন, এ ব্যপারে আমিরাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে কর্মসূচি দিতে বলা হয়েছে। তারা ব্যর্থ হলে উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হবে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হিরণ বলেন, দুই গ্রুপেই আমাদের দলের লোকজন। তুচ্ছ ঘটনায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান পাল্টাপাল্টি মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ছাত্রলীগ নেতার রগ কাটার ঘটনায় নেজাম উদ্দিন মাস্টার ও মো. নাঈম নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) তাসলিম হুসাইন বলেন, দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে মর্মে দু’পক্ষ পাল্টা-পাল্টি মামলা করেছেন। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে। আহত ছাত্রলীগ নেতা তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন