বেশ কিছু দিনের টানাপড়েন শেষে গত ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এক মঞ্চে উঠেছিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। ওইদিন রওশন এরশাদ ‘সব কিছু ভুলে’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে যেসব নেতৃবৃন্দকে দল থেকে বের করা হয়েছে, তাদেরও ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন তিনি। ওই দিন আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি জিএম কাদের। কিন্তু ওই দিনের পর থেকে ফের শুরু হয় বিরোধ। এরপর আর কোনো অনুষ্ঠানে দলের এই দুই শীর্ষ নেতাকে একসঙ্গে দেখা যায়নি।
‘বেগম রওশন এরশাদের নির্দেশে’ আজ সোমবার বিকাল ৪টায় রাজধানীর গুলশানে আলোচনাসভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বেগম রওশন এরশাদ। পার্টির প্রায় সবাই আমন্ত্রণ পেলেও চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে জানানো হয়নি বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, কিছুদিনের মধ্যে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে একটি বৈঠকেরও আয়োজন করছেন রওশন। সূত্র জানিয়েছে, এই আয়োজনেও ঠাঁই হবে না জিএম কাদের ও চুন্নুর। পার্টির নেতাদের অনেকেই বুঝতে পারছেন না, জাতীয় সম্মেলন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দল ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে গত ২০ মার্চ গুলশানে রওশন এরশাদের বাসায় মিলাদ মাহফিল ও আলোচনাসভা হয়। অন্যদিকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে অনুষ্ঠান হয় কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। পরে এ বিষয়ে জিএম কাদের আমাদের সময়কে বলেছিলেন, ‘ওই আয়োজন (রওশনের) জাতীয় পার্টির নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, ‘জিএম কাদের ও চুন্নু সাহেব জানেন কিনা যে, এত লোকের ভিড়েও তারা ভীষণ একা। তাদের সামনে-পেছনে যারা আছেন, কেউ তাদের লোক নয়। আগামী জাতীয় সম্মেলন হলেই তারা তা ভালো করে টের পাবেন।’
দলের সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলীয় বৈঠক করে সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে যে গণমাধ্যমে কেউ বক্তব্য দিতে পারবেন না। তাই হয়তো কোনো নেতা পদ হারানোর ভয়ে কথা বলছেন না। নেতাকর্মীরা কথা বলতে পারলে বুঝতে পারতেন দলে তাদের পজিশন কী।’
সোমবারের ইফতার আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আমাদের সময়কে বলেন, ‘এদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। এসব কে করে, আমরা চিনি না। মেডাম (রওশন) যাচ্ছেন, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা সংগঠনের কোনো বিষয় নয়।’
পার্টির চেয়ারম্যান এই আয়োজনে আমন্ত্রণ পেয়েছেন বা যাবেন কিনা জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, ‘না না। বললাম তো, এদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এরা পার্টির বহিষ্কৃত লোক, এরা কী করে না করে, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। চেয়ারম্যান যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।’
দলে আবারও বিভাজন তৈরি হলো কিনা জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলে কোনো গ্রুপ নেই। গ্রুপ একটাই। এরা দলের লোক না।’
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষে ইফতারের আয়োজন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। কাজী মামুনুর রশীদের দাবি, তিনি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি যুগ্ম আহবায়ক। জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা বেগম রওশন এরশাদ মেডামের নির্দেশে এই আয়োজন করেছি। সেখানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকেও দাওয়াত দিয়েছি। এটা পবিত্র কাজ। পবিত্রতার সঙ্গেই করার চেষ্টা করছি। তবে আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা দলের কেউ না। এটা তারা বলতে পারেন না। যেমনটা আমরা বলতে পারি না যে তারা দলের কেউ না। আসলে এভাবে বলা যায়, আমরা সবাই পল্লীবন্ধু এরশাদের কর্মী।’
কাজী মামুনুর রশীদের দাবি, রওশন এরশাদ যে সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন, বিশেষ কারণে তা স্থগিত ছিল। কিন্তু শিগগিরই নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।
সম্মেলনের বিষয়ে জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের আমাদের সময়কে ২০ মার্চ বলেছিলেন, ‘সম্মেলনের জন্য তিনিও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেপ্টেম্বরের দিকে সম্মেলন হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন