বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘জনগণের টাকায় কেনা বন্দুক দিয়ে গুলি করে জনগণকে হত্যা করা হচ্ছে। অতীতে বিশ্বের কোনো স্বৈরশাসক কখনো বুঝতে পারেনি যে, বন্দুকের নল ঘুরতে পারে। যখন বুঝতে পারে তখন তাদের আর সময় থাকে না। সুতরাং সময়ের আগেই সাবধান হয়ে যান। বন্ধুকের নল কিন্তু আপনাদের দিকেও ঘুরে যেতে পারে যে কোনো সময়ে।’
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে বিয়াম মিলনায়তন সংলগ্ন সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তরের তেজগাঁও জোনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলীয় নেতা নুরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন প্রধান, শহিদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর ১৬টি স্পটে ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশের আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমাবেশস্থলের আশেপাশে প্রিজন ভ্যান, জলকামান, এপিসিসহ অবস্থান নেন। তবে সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই তারা চলে যান। বরাবরের মতো লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আগেই বলেছিলাম আমরা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কিংবা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ব্যারিকেড ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবো। রাজধানীজুড়ে সমাবেশ করবো। অনুমতি না দিলে রাজধানীর অলিগলিতে মিছিল করবো। যেখানে প্রয়োজন সেখানে সমাবেশ করবো। সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। যারা আমাদের বাধা দেবে প্রমাণ হবে তারা সংবিধান মানে না, গণতন্ত্র মানে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশে কর্মসূচি দিয়েছিলাম। সরকারের সহ্য হয়নি। আমরা জনগণকে জানাতে চাই আপনাদের সমস্যা নিয়ে রাজপথে থাকব। জনগণের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের চার নেতাকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। খুনিদের বিচার আমরা করবো। বিচার করে ছাড়ব। মৃত্যুকে আমরা পরোয়া করি না। সরকার টিকে থাকতে পারবে না। লুটপাট, দুর্নীতি, ব্যাংক ডাকাতি, হামলা-মামলা নির্যাতন করার জন্য সরকারকে টিকিয়ে রাখা যাবে না।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার রাশিয়া থেকে গম আমদানি করতে চায়। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। সেখানে মধ্যস্বত্ত্বভোগী বসিয়ে দিয়েছে। এক সরকার আরেক সরকারের কাছ থেকে গম আনবে। এখানে আবার মধ্যস্বত্ত্বভোগী থাকবে কেনো? এতে করে গমের দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের জনগণ কষ্টে আছে। গমের দাম বাড়লে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে প্রতিটি থানার অন্তর্গত বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপি যেসব নেতা সভা-সমাবেশের কর্মসূচিতে অর্থায়ন করছে তাদের তালিকা করতে। আমাদের প্রশ্ন এই তালিকা করে কী করবেন? একজনকে গ্রেপ্তার করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রাজপথে নামব। অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করবো।’
তিনি বলেন, ‘আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য কত প্রক্রিয়া করতেছে সরকার। এই যে ইভিএম কীসের ইভিএম? আট হাজার কোটি টাকা দিয়ে ইভিএম কিনে আনবেন। এই টাকাও ব্যয় হবে অবৈধভাবে। কারণ অবৈধ সরকারের অবৈধ ইলেকশন কমিশন। এই কমিশন কোনো টাকা ব্যয় করতে পারে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল মিন্টু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারসহ স্থানীয় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন