শেখ হাসিনার মুখেই এইসব মানায়। লন্ডনে সফরে থাকা শেখ হাসিনা বিবিসি’র মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, একমাত্র তাঁর সরকারের অধীনেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগের সব নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি নিজের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সাফাই গান বিবিসি’র সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে।
শেখ হাসিনা কাছে বিবিসি’র সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, "আপনার দেশে নিযুক্ত প্রয়াত রাণীর হাইকমিশনার আপনার সরকারের কাছে আগামী বছরে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার চেয়েছেন। আপনি কি এই অঙ্গীকার করবেন?
এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, একমাত্র তার সরকারের অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ধানভানতে শিবের গীতও গেয়েছেন এই উত্তর দিতে গিয়ে। জবাবে শেখ হাসিনা আরো বলেন, "দেখুন, আমাদের দেশ দীর্ঘ সময় সামরিক শাসকের অধীনে ছিল। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেই হোক আর প্রকাশ্যে বা গোপনেই হোক। ১৯৭৫ সালে যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়, তিনি তখন দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আপনি জানেন, আমার পুরো পরিবার-আমার মা, ভাইয়েরা, তাদের স্ত্রীরা এবং অন্যান্য সদস্যসহ ১৮ জনকে হত্যা করা হয়। তখন থেকে পরের ২১ বছর পর্যন্ত কোনো না কোনো সময় আমাদের দেশে সামরিক শাসন ছিল। বারবার। আনুমানিক ২০ বার সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল। প্রতিবারই রক্তক্ষয় হয়েছে। কোনো গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। আমার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আমার সংগ্রাম করতে হয়েছে।"
তার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিবিসির সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, "কিন্তু জাতিসংঘ ও বাংলাদেশে রাণীর নিযুক্ত হাইকমিশনার আপনার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে এবং গুমের অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘ কথা বলেছে।"
জবাবে গুমের বিষয়টি অস্বীকার করে শেখ হাসিনা লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "অনেক মানুষই অভিযোগ তুলতে পারে। কিন্তু তার কতটুকু সত্য, তা আপনাকে বিচার করতে হবে। তার আগে কোনো মন্তব্য করা উচিত না। কারণ আমি আপনাকে বলেছি, আমাদের দেশে সেনা শাসক দেশ শাসন করেছে। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তারা কখনো মানুষের কাছে গিয়ে তাদের জন্য ভোট চায়নি। তারা সেনাবাহিনী, প্রশাসন ব্যবহার করেছে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সময় আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে পাবেন।"
বিবিসি’র সাংবাদিক তখন বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলে শেখ হাসিনা সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, "অবশ্যই। এটা আমার সংগ্রাম। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা আমার সংগ্রাম। "
বাংলাদেশে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে গুমের বিষয়ে বিবিসির সাংবাদিক প্রশ্ন করেন-"গুমের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, আপনি কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? এই বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ জানিয়েছে।"
সরাসরি উত্তর না দিয়ে শেখ হাসিনা লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, "আপনার দেশে বা কত দেশে কত মানুষ হারিয়ে যায় তা আপনি বিচার করতে পারবেন। এই বিষয়ে আমি মনে করি প্রথমে সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারপর তারা অভিযোগ করতে পারে।"
রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যে সংক্ষিপ্ত সফরে রয়েছেন শেখ হাসিনা। এখান থেকে তিনি যাবেন আমেরিকায় জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে। এই সফরের ফাঁকে তিনি যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
বিবিসির কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারের বড় অংশ জুড়ে ছিলো শেখ হাসিনা রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রসঙ্গ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। তার শাসনামলে বিরোধী দল ও মতের লোকদের দমন করতে গুম-ক্রসফায়ারের মতো ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন করেছে শেখ হাসিনার অনুগত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাধীনভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘ। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার স্বাধীন তদন্তে জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপকে ডাকার তাগিদও দেয়া হয়েছে। এছাড়া, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সংলাপের সুযোগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার তাগিদও দিয়েছে জাতিসংঘ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন