এবার হাসপাতালে বসেই সংঘর্ষে জড়ালেন ছাত্রলীগের দুপক্ষের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম তলার কেবিনে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার রাত ১টায়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের সাতজন আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
তবে সংঘর্ষে আহত হলেও তারা হাসাপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালে দুপক্ষের পুনরায় সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, আমাদের ছাত্রলীগের দুজনকে মারধর করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
তিনি বলেন, মায়িদুর রহমান বাকি দুপুরে ছোট ভাইসহ ক্যান্টিনে যান। সেখানে ছাত্রলীগের সিফাত, তার ভাই ছাত্রদল নেতা নুরুদ্দিন মাফি মিলে মায়িদুর রহমানকে মারধরের চেষ্টা চালায়। তাকে বাঁচাতে গেলে ওর ছোট ভাইকে মারধর ও মায়ের গায়ে জুতা নিক্ষেপ করে।
মায়িদুর রহমান বাকি বলেন, আমরা এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি। ওরাও ভর্তি আমরাও ভর্তি। আমাদের ওপর এভাবে হামলা চালানোর পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
মায়িদুরের মা সৈয়দা কাজল বলেন, চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে গিয়ে দেখি ওদের বিরোধী গ্রুপটি আমার ছেলে মায়িদুর রহমান বাকিকে মারধর করতে চাইছে। আমি তাকে সরিয়ে আনলে আমার ছোট ছেলেকে মারধর করেছে চার-পাঁচজনে। ওরা জুতা নিক্ষেপ করেছে। সেই জুতা আমার গায়ে এসেও পড়েছে।
তবে পাল্টা অভিযোগ করেন মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা আহমেদ সিফাত।
তিনি বলেন, আমাদের কেবিনের সামনে এসে বহিরাগত কয়েকজন হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমাদের মারধর করবে, খুন করবে ইত্যাদি বলছে। আমরা প্রতিবাদ করায় ওরা কেবিন পর্যন্ত আসছে মারধর করার জন্য। হাসপাতালে চিকিৎসা সুন্দরভাবে দিলেও ওদের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তারা উভয়পক্ষই এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে নিজেরা কিছুটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলেন। খবর পেয়ে আমরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। বর্তমানে কোনো সমস্যা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে না যাতে হাসপাতালের পরিবেশ বিঘ্ন হয়। আমি মনে করি হাসপাতালের চিকিৎসার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান রাখব, এমন কোনো আচরণ না করতে যাতে চিকিৎসা পরিবেশ ব্যাহত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী হয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রধান দুটি পক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে এমপির পক্ষের অনুসারীদের নেতৃত্বে রয়েছেন অমিত হাসান রক্তিম ও ময়িদুর রহমান বাকি এবং মেয়রপন্থীদের নেতৃত্বে আহমেদ সিফাত ও সৈয়দ রুম্মান ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রয়েছেন। উভয়পক্ষই দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ঘটনায় নেতৃত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন