গত মঙ্গলবার (২৪ মে) এবং বৃহস্পতিবার (২৬ মে) ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে জঙ্গি ছাত্রলীগের হামলায় নৃশংসতার দৃশ্য পত্রিকা এবং সোস্যাল মিডিয়ায় ভাসছে। প্রকাশে লাঠিসোট নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল জঙ্গি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের নৃশংস হামলা থেকে রেহাই পায়নি ছাত্রদলের মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্রীরাও। এমনকি জঙ্গি ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে গুলি করার দৃশ্যও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কিন্তু তাদের কারো বিরুদ্ধে কোন রকমের ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা সকলেই নিরাপদে প্রকাশে ঘুরছেন। উল্টা মামলা হয়েছে যাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে আবারো প্রমানিত হয়েছে জঙ্গি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তাণ্ডবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের পুলিশের উস্কানি ও সহযোগিতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
বৃহস্পতিবার ছাত্রীগের সন্ত্রাসী হেলমেট বাহিনীর তাণ্ডবে রক্তাক্ত হয়েছে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গন। মাজার গেইট দিয়ে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে প্রবেশ করে আইনজীবীর গাড়ি ভাংচুরসহ অনেক আইনজীবীকে প্রহার করেছে হেলমেট বাহিনীর জঙ্গি সন্ত্রাসীরা। ছাত্রদলের ৩জনকে হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। অথচ, সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। বরং ছাত্রদলের একজন আহত কর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের জঙ্গিরা তাঁকে কুপিয়েছে। গুরুতর আহত সেই ছাত্রদল নেতা এখন কোথায় আছেন তাও কেউ বলতে পারছেন না।
এসব হামলার বিরুদ্ধে পাটকেল ছুড়ে ছাত্রদল প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। জঙ্গি ছাত্রলীগের দুইদিনের হামলায় ছত্রদলের শতাধিক নেতা-
কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবী করেছিলেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আহতদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে দেখতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, শতাধীক ছাত্রদল নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
জঙ্গি ছাত্রলীগের তাণ্ডবে আহতদের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজয় ৭১ হলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আজাদী,তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ মানিক, ছাত্রদল নেতা গোলাম মাওলা লিখন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা শাহাবুদ্দিন শিহাব ও বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা জুয়েল আল মাহমুদের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
শাহাবুদ্দিন শিহাবকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া হলে সেখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আবারো তাঁর ওপমর হামলা চালায়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগেই কুপিয়ে আরো রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগের জঙ্গি সন্ত্রাসী গুণ্ডারা।
উপরে উল্লেখিত বাকী আহতরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদেরকে রড ও লাঠি দিয়ে মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আক্রমনের ফলে অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের প্রত্যেকের মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন থাকায় সিটিস্কেন করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পেতে আরো একদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এলডিপি চেয়ারম্যান কর্ণেল অব অলি আহমদ ছাত্রদলের ওপর নৃশংস হামলার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। হামলাকারী ছাত্রলীগের জঙ্গিদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার ঢাকা মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশের পশ্রয় ও উস্কানিতে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে দিবালোকে অস্ত্র নিয়ে জঙ্গি হামলা চালিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিরোধী জোট নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মব্রীজ থেকে টুস করে ফেলে দেওয়া এবং নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে পদ্মনদীতে চুবিয়ে তোলার কথা বলে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে ছাত্রদল প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই কর্মসূচির অংশ হিসাবে মঙ্গলবার ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বঘোষিত সাংবাদিক সম্মেলনে যাওয়ার পথে সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে কার্জন হলের সামনের রাস্তায় আবারো সশস্ত্র অবস্থায় ছাত্রদলের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হেলমেট বাহিনী।
প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে তাণ্ডবরত ছাত্রলীগের জঙ্গি সন্ত্রাসীরা—
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন