গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পেয়েছেন এক ‘জামায়াত নেতার ছেলে’। অভিযুক্ত মহিবুল হাসান মুকিতকে করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক।
এ ঘটনায় বিব্রত ও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ- ‘জামায়াত নেতার ছেলে’ কিভাবে আওয়ামী লীগের এত গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন? এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছেও লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। পরে কেন্দ্রের নির্দেশনায় অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
মুকিতের পরিবারের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা বিষয়ক লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক যুগান্তরকে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন। সেই কমিটির প্রতিবেদন পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।
একই বিষয়ে পলাশবাড়ী আওয়ামী লীগের ঘোষিত কমিটির সভাপতি শামিকুল ইসলাম লিপন যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তাধীন বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।
এদিকে সোমবার মহিবুল হাসান মুকিত ফোন করে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একটু পরে কথা বলছি বলে ফোন কেটে দেন। পরে বেশ কয়েকবার ফোন করলে এবং এসএমএস দিলেও তিনি সারা দেননি।
তবে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মুকিত তাদের কাছে তার বিরুদ্ধে আনা সকল অস্বীকার করে দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি পদে শামিকুল ইসলাম লিপন, সহ সভাপতি সাইফুল্লাহ রহমান চৌধুরী তোতা, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মন্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের নাম ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম কেন্দ্রে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন। পরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেকেই একই অভিযোগ তোলেন।
এদিকে অভিযোগের পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুলতান আলী মন্ডলকে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জরিদুল হক ও দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম সাকাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সুলতান আলী মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করেছি। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। আমাদের কাছে এখন সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেছে। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যেই আমরা আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা আওয়ামী লীগের কাছে জমা দেওয়ার পাশাপাশি এর অনুলিপি কেন্দ্রেীয় আওয়ামী লীগের কাছেও পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে মুকিত আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার ক্ষুব্ধ ও বিব্রদ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন- এই রকম জামায়াত পরিবারের ছেলে কিভাবে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়? তদন্ত কমিটির কাছে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেনও। এখন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থার আশায় রয়েছেন।
২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পলাশবাড়ি থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান শেখ ফরিদ যুগান্তরকে বলেন, আমি যখন ছাত্রলীগের দায়িত্বে ছিলাম তখনও মুকিতদের বাসা শিবিরের মেস। সর্বশেষ ২০১৩ সালেও পুলিশের অভিযানে বহু জামায়াত-শিবিরের বই পুস্তক পেয়েছেন। আমাদের ছেলেরা এই মেস কয়েকবার ভাংচুর করেছে। তদন্ত কমিটি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আমি আমার কথা তাদেরও বলেছি। এখন দেখি উনারা কি করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন