সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়তো আগামী এক-দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা হবে। তারা জিততে পারবে না, কারণ নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে।
শনিবার বিকেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশের নম পার্কে আয়োজিত আওয়ামী লীগের কর্মী সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি এদিন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত স্কুলছাত্র ত্বকি হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তও চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ত্বকী হত্যা নিয়ে কেউ কেউ সস্তা জনপ্রিয়তা চাইছেন। আজকে আমি সরকারকে জানাতে চাই, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতে চাই, আমি দেশের আইন বিভাগকে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জে কেউ কেউ ত্বকী হত্যা নিয়ে আমার পরিবারের দিকে আঙুল দেখাতে চান, আমি বলতে চাই, অবিলম্বে এই হত্যার বিচার করা হোক। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে বিচার করা হোক এবং অবিলম্বে করা হোক। হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, সেই সাথে যারা দুর্নীতি করে, তাদের বিরুদ্ধে নজর দেওয়া হোক। তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হোক।
শামীম ওসমান বলেন, সামনে কঠিন সময় আসছে। সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে একটি পক্ষ দেশকে সিরিয়া, আফগানিস্তান বানাতে চায়। আজকে দেখেন সেখানে কে কোন দল সেটা দেখা হচ্ছে না। সবার ওপরই আক্রমণ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে একটা ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। সামনে আমাদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, কারও পায়ের ওপর ভর দিয়ে আওয়ামী লীগ করি না, করবও না। নেতা একজনকেই মানি, সেটা হচ্ছে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা। আর বাকিগুলো খুব একটা গোনায় ধরি না। এটাই পরিষ্কার বাংলা কথা। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে বলছি, হাইব্রিড না, অরিজিনাল আওয়ামী লীগারদের বলছি, পেছনের ব্যানারে যেই মহিলার ছবিটি আছে, তিনি জাতির পিতার কন্যা, তার হাত আপনাদের মাথার উপরেই আছে, অন্য কারও মাথার উপরে নাই। তার দোয়াও আপনাদের সাথে আছে। ভালোবাসাও আপনাদের সাথে আছে, বিশ্বাসও আপনাদের সাথে আছে। নারায়ণগঞ্জের সচেতন মানুষকে বলছি, সাংবাদিক ভাইদের বলছি। ধাক্কা যেটা আসছে, দেশ যদি নষ্ট হয়, ওই দেশে কিন্তু আমি, আপনি, আমার পরিবার, এটা দেখবে না। আফগানিস্থানে কে কোন পার্টি করে কোনো হদিস নেই, সিরিয়ায় নেই। আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ আছে, আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ আছে। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে কিন্তু দেশ ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে, শেখ হাসিনা কিন্তু এখন আর আওয়ামী লীগের নয়, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা। আমাদের তাকে দরকার। দেশটাকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, এই একটা মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত ওরা ধাক্কা দিতে পারছে না। কিন্তু তারপরেও এই দেশে প্রচুর রোহিঙ্গারা ঢুকে যাচ্ছে। ঢুকে গেছে। তবে, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই। জিতব আমরাই, ইনশা আল্লাহ। কারণ আমরা সত্যের পক্ষ, সত্য আঘাত প্রাপ্ত হয়, কিন্তু পরাজিত হয় না। এটা আমি বিশ্বাস করি। একটু আঘাত পাব, একটু কষ্ট পাব। কিন্তু জিতব শেষ পর্যন্ত আমরাই।
শামীম ওসমান বলেন, একটা নির্বাচন হয়েছে। সোয়া ৫ লাখ ভোটের নির্বাচন। আমার ৩ ইউনিয়নে সাড়ে ৬ লাখ ভোটার। নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন এলেই কেমন যেন খেলা শুরু হয়ে যায়। ২০১১ ও ২০১৬ তে এবং এবার কী করেছি তা আমি জানি। বলব না কারণ দলকে ভালোবাসি। রাজনীতিতে আঘাত পেয়েছি কিন্তু কষ্ট পাইনি। কবরস্থানে যা হয়েছে তা কোনো সন্তান মানতে পারে না। নেত্রী আমাকে বলেছিলেন আমি সব বিষ হজম করি আমি নীল কণ্ঠি। আমাকে আঘাত করে কথা বললেও আমি কিছু বলি না। কারণ আমি আমার নেত্রীর মতো হতে চাইছি। এটা খুব কষ্টের, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার স্ট্রেস অ্যাটাকও হয়েছিল। আমি আমার বাবা-মা ও ভাইকে ভালোবাসি। আমি বলেছিলাম গোপনেও হলেও তাদের বলেন, আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে। শয়তান আর ফেরেশতা ছাড়া সবাই ভুল করে। তাও হয়নি, তাই কষ্টটা আরও বেড়ে গেছে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের তিন ভাইয়ের হাত শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ওরা যদি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মরেও যায় তাহলে তাই হোক। আমার মা আমাকে একটা কথা বলেছিলেন নামাজ পড়ো। নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেক কথা বলছিলাম। তিনি বলেছিলেন হতাশ হলে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী পড়বে। বড় ভাই নাসিম ওসমান বলেছিলেন, আল্লাহকে চেনার চেষ্টা করো। আমি বুঝতে পারিনি চিনব কীভাবে। পরে আমি বুঝেছি এভাবে চেনা যায় আল্লাহকে। সব ধর্ম সুন্দর, কোনো ধর্ম মানুষকে খারাপ শিক্ষা দেয় না।
তিনি বলেন, আমি প্রেস কনফারেন্স না করলে সমস্যা হতো। একটা পক্ষ মাঠে নেমেছিল, কারা এরা। কেউ কেউ লেখে দল আমাকে দিয়ে তৈমূর ভাইকে কিছু প্রমাণ করার জন্য দাঁড় করিয়েছে। কেউ আমাকে এ নির্দেশনা দেয়নি। তবে, লেখা হচ্ছে এটা ইচ্ছা করে করা হচ্ছে। এত নিচু লেভেলের চিন্তা আমার নেত্রীর নেই। রাজনীতিতে কিছু নোংরামি আছে। নারায়ণগঞ্জ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
তিনি বলেন, সামনে আমার জানামতে প্রচণ্ড বড় আঘাত আসছে দেশের ওপরে। কে বাঁচাতে পারে, ওপরে সৃষ্টিকর্তা আর নিচে শেখ হাসিনা। যত আঘাত আসছে তিনি নিজের ওপর নিচ্ছেন। তার ওপর যখন গ্রেনেড হামলা হলো তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল! বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা বিদেশে আশ্রয় নেয় তখন কোথায় মানবাধিকার? এখানে অনেকের ভেতরে রক্তক্ষরণ আছে। সময় আসছে আমাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তারা যুদ্ধ করেছিল দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য। আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়তো আগামী এক-দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা হবে। তারা জিততে পারবে না, কারণ নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে।
কর্মী সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সিনিয়র সহসভাপতি চন্দন শীল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক কাজিমউদ্দিন প্রধাণসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন