খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের সময় প্রতি টন চালে দুই হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ঘুষ না দিলে তিনি চাল গুদামে নিতেন না। বাধ্য হয়ে তাকে ঘুষ দিতে হতো। এ বিষয়ে দুদকের কাছে চাল মালিকরা লিখিত অভিযোগ করলেও দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়নি। ফলে বরাবরই বেপরোয়া ছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম মো. খোরশেদ আলম মাসুদ। তিনি যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সহ-সভাপতি ও খাদ্য পরিদর্শক। একই সঙ্গে মাসুদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ঘুষ দুর্নীতিসহ নানা অপকীর্তির তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া খোরশেদ আলম ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভৈরব খাদ্য গুদামে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল খাদ্য গুদামে কর্মরত তিনি। তার বাসা ঢাকায়। মাসুদ ভৈরব খাদ্য গুদামে কর্মরত থাকা অবস্থায় নানা কেলেংকারীসহ ঘুস দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি হয়। তার বিরুদ্ধে খাদ্য অধিদপ্তরে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে সেগুনবাগিচার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক অর্থ সম্পাদক এমদাদুল হক খানের বাসায় ঢুকে গত বুধবার রাতে স্ত্রী সন্তানের সামনে তার ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার এমদাদ হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।
২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর ভৈরবের অটোরাইস মিল মালিক তারিক আহমেদ খাদ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, খোরশেদ আলম তার কাছ থেকে চাল সরবরাহ বাবদ ২২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। একই বছরে স্থানীয় আরেক অটোরাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে চাল সরবরাহ বাবদ ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এ দুজনের অভিযোগ খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
দুর্নীতিটি লুটপাট করার অভিযোগে তাকে গত বছর দুদক কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়। ভৈরব খাদ্য গুদামে কর্মরত থাকার সময় অফিসে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে যা তদন্তে প্রমাণও মিলেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান। মাসুদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, খোরশেদ আলম মাসুদ ভৈরবে কর্মরত অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহ- সভাপতি ছিলেন। দলীয় কর্মকাণ্ড মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণের নানা ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে তার দাবি, চাকরির আগে তিনি যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভৈরবে কর্মরত অবস্থায় চাল মিল মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভৈরব অটোরাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, খাদ্য গুদামে তিনি চাল সরবরাহের সময় খোরশেদ আলম মাসুদ প্রতি টনে দুই হাজার টাকা করে ঘুষ নিতেন। তিনি এককালীন ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন তাকে। ঘুষ না দিলে সে চাল গুদামে নিতেন না। বাধ্য হয়েছেন ঘুষ দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও ফল পাননি বলে জানান। কিশোরগঞ্জের সাবেক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির আহমেদ জানান, খোরশেদ আলমের সব অভিযোগ তদন্ত হয়েছে। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তর বিভাগীয় মামলাও করেছে। পরে তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তারপর তদন্তের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে আজ শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত খোরশেদ আলম মাসুদের স্ত্রী নাহিদ তন্ময় তনু জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। তার ফ্লাটটি সাংবাদিক এমদাদুল হক খাঁনের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। ফ্লাটটি তার ননদকে দেওয়ার জন্য ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু এমদাদুল না ছাড়ার কারণে এ ঘটনাটি ঘটায় তার স্বামী। কেন হঠাৎ করে এমন ঘটনা ঘটালো তিনি জানেন না। এখন আইনগতভাবে যা হবার তা হবে। এ বিষয়ে তার কিছু বলার নেই বলে জানান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন