নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নানা রকম সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ ভোটাররা এক রকম আমেজেই রয়েছেন। তবে আতঙ্কে রয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের নির্বাচনী এজেন্টরা। তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থককেও নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করেছেন, পুলিশ আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। আমাদের জেলা তাঁতী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল জানিয়েছে তার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে। মৎস্যজীবী দলের সভাপতি আনোয়ার প্রধানকে আটক করা হয়েছে। এমন অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করছেন। এমনকি সরকারি দলের যারা নৌকার পক্ষে নামেননি তাদেরও হয়রানি করা হচ্ছে।
তৈমূরের কর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘কোথায় বা কাদের আটক করা হচ্ছে সে তালিকা দিতে বলুন। তালিকা দিতে পারলে যাচাই করে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অপর দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আমি জানি না কাকে কোথায় ধরা হচ্ছে। আমি শুধু শুনেছি, বিএনপির এক নেতাকে ধরা হয়েছে তার নামে হেফাজতের ঘটনার মামলা ছিল। আর কাকে ধরা হয়েছে এটা আমি জানি না, জানার বিষয়ও না। এটা প্রশাসন দেখবে।
গতকাল নির্বাচনী প্রচারকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুলিশের কারণে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি বলেছেন, জনগণ ভীত না। আমার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। বিদেশী দূতাবাসের যারা আছেন, পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মী যারা আছেন সবাইকে বলব নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে। কেন আমাদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে তা দেখতে। তৈমূর খন্দকার বলেন, আমার দলের নেতাকর্মীরা তো নৌকায় ভোট দেবে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের কমিটি ভেঙে দিচ্ছে। কারণ তারা নৌকার পক্ষে কাজ করছে না। তিনি আরো বলেন, কাউকে ধমক দিয়ে গালি দিয়ে তো কাজ করানো যায় না। নারায়ণগঞ্জের জনগণের কাছে মেসেজটা ক্লিয়ার যে তাদের মাঝে বিরাট ফাটল। ঢাকা থেকে মেহমানরা এসেও এই ফাটল মেটাতে পারেননি। হাতি এখন জনগণের মার্কা। হাতির মাধ্যমেই পরিবর্তন আসবে।
অন্য দিকে গতকাল প্রচারণাকালে ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে আইভি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি অবনতির দিকে যায় তাহলে প্রশাসন তো আছেই। এখানে যৌথ প্রশাসন কাজ করছে, এটা তারা দেখবে। আমার এটা দেখার সময় নেই। আমার এখন জনগণের কাছে যেতে হবে। জনতার ভোট চাইতে হবে।’ ভোটের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে টানা দুই মেয়াদের মেয়র আইভি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে একটু সমস্যা হতেই পারে। আমি মনে করি এ জন্য প্রশাসন অত্যন্ত সচেতন। তারা এগুলো দেখাশোনা করবে। আমার ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে।’
এ দিকে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার শেষ সময়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূরের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়ায় ১২নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে শহরের খানপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল থেকে পুলিশ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে আটক করে। তিনি ছিলেন মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক। এ ছাড়া ওই দিন রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ২৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতা আব্দুর রহিম, ৭নং ওয়ার্ড থেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা মাসুম ঢালী, ২২নং ওয়ার্ড থেকে আশরাফুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ ছাড়া গভীর রাতে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদল নেতা জোসেফের বাড়িতে যায় পুলিশ। প্রথমেই তারা বাসার দারোয়ানের মোবাইল ফোন জব্দ করে। এরপর গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে জোসেফকে খুঁজতে থাকে। সেই সাথে তার পরিবারের সদস্যদের বলতে থাকে, জোসেফকে বলে দিস নৌকার পক্ষে যেন কাজ করে। অন্যথায় তাকে ছাড় দেয়া হবে না। এ সময় জোসেফ পালাতে গিয়ে বাসার ওপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েন। এতে পা ভেঙে যায়। বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন তৈমূর আলম খন্দকারের ব্যক্তিগত সচিব আলাল।
এ ছাড়া তৈমূরের নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক এ টি এম কামাল গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, কেন্দ্র এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা তৈমূরের পক্ষে কাজ করছি তাদের ওপর এক ধরনের প্রশাসনিক চাপ আসছে। আমাদের সরাসরি চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা মনে করি নির্বাচন থেকে আমাদের দূরে রাখার এটা একটা অপচেষ্টা।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনে কোনোরকম নাশকতার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। সেভাবে নির্দেশ দেয়া আছে। আমরা শতভাগ স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করব।’ তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সামান্যতম শঙ্কা বা সংশয় নেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসী ধরতে অভিযান চলছে। তৈমূরের কর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, কোথায় বা কাদের আটক করা হচ্ছে সে তালিকা দিতে বলুন। তালিকা দিতে পারলে যাচাই করে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, শুক্রবার ভোর রাত থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সব লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা থাকবে। জেলার সংশ্লিষ্ট থানাগুলোয় বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে জেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নাশকতা করতে পারে এমন লোকদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন