দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে ফের কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। তবে দলীয় প্রধানের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমঝোতার পথ খোলা রেখে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায় হাইকমান্ড।
এ ইস্যুতে আগামীতে আন্দোলন কর্মসূচির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে আপাতত জেলায় জেলায় সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশন, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির কথা রয়েছে। ঢাকার বাইরে কর্মসূচি জোরালো করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়ে মত দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে বিভাগীয় ‘লংমার্চ, চলো চলো ঢাকা চলো’র মতো কর্মসূচি রয়েছে খসড়ায়।
এছাড়া অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করা যায় কিনা-তাও ভেবে দেখার পরামর্শ রয়েছে সেখানে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়ে এ খসড়া তৈরি করা হয়। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচির এ খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
ADVERTISEMENT
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা খসড়া তৈরির বিষয়টি স্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, আগামী দিনে কি কি কর্মসূচি নেওয়া যায় এজন্য দায়িত্বশীল নেতাদের একটি খসড়া করতে বলা হয়েছিল। তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত কিছু নয়। এতে সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। চূড়ান্ত করবে জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
এই মূহূর্তে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে জেলায় জেলায় সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশনের মত গঠনমূলক কর্মসূচি থাকতে পারে। এ ধরনের কর্মসূচি উপজেলা-পৌর-ইউনিয়ন পর্যায়ে পালন করা হবে। দু-এক দিনের মধ্যে এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ধীরে ধীরে কঠোর আন্দোলনের ব্যাপারে খসড়ায় প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের টানা আট দিনের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ। এদিন সারা দেশে ছাত্রদলের উদ্যোগে সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, খালেদা জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তাকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে টানা কর্মসূচি চলছে। কিন্তু তারপরও বিদেশে পাঠানের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীরা কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তবে এখন গঠনমূলক কর্মসূচি দিয়ে ধীরে ধীরে কঠোর আন্দোলনের দিকে যেতে চায় হাইকমান্ড। যা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। তবে এখন আবারও সমাবেশ, অনশন, মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচির ঘোষণা হতে পারে।
এক্ষেত্রে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে কর্মসূচি জোরালো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা, উপজেলা, থানা, পৌর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এভাবেই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে জনমত গঠনের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে। এটি নির্ভর করবে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর। তবে কোন ধরনের হঠকারী কর্মকাণ্ড বা কারও ফাঁদে পা না দিতেও নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, আমরা চাচ্ছি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হোক। এটা ন্যূনতম একটা দাবি, কোনো দয়ামায়া নয়। এটা একজন নাগরিকের সাধারণ অধিকার। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন, বুদ্ধিজীবী-সবাই বলছেন দেশনেত্রীকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তার যে রোগ হয়েছে, এভাবে যদি চলে তাহলে বেশিদিন বাঁচবেন না। বাংলাদেশে তার চিকিৎসার তেমন সুযোগ নেই। লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু সরকার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছে না। দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আমাদের কর্মসূচি চলছে। এজন্য যা যা করা দরকার আমরা করব।
বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে যা যা কর্মসূচি পালন করার দরকার তা বিএনপি করবে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পরও যদি সরকার দেশনেত্রীকে বিদেশে না পাঠায় তাহলে সরকার পতনের আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। ইতোমধ্যে দুজন সিনিয়র নেতা ঢাকার বেশ কয়েকটি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে বিশ্বের প্রভাবশালী পাঁচটি দেশ ও কয়েকটি সংস্থার কূটনীতিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তাদের বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার অবস্থা ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের ব্যাপারে অবহিত করা হয়।
আরও জানা গেছে, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপির কর্মসূচিতেও খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবির বিষয়টি সামনে থাকবে। এ উপলক্ষ্যে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আয়োজনে সভা-সেমিনার করা হবে। সেখানেও দলীয় প্রধানের বিষয়টি থাকবে মূল ফোকাস।
জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো না হলে সরকারের পরিণতি ভয়ংকর হবে। এ কর্মসূচি সরকার পতনের কর্মসূচিতে রূপ নেবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন