দলীয় কর্মসূচি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে কয়েক ধরনের ‘দুশ্চিন্তা’ তৈরি হয়েছে দলে। প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষ দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলেও এর শুরু ও শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন তৎপরতার কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শীর্ষনেতৃত্বে।
বিএনপি তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছরের ১৭ আগস্ট চন্দ্রিমা উদ্যানে ঢাকা মহানগর (উত্তর) কমিটির পুষ্পস্তবক অপর্ণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলারক্ষকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং এতে অন্তত এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। ওই সময় কর্মসূচিতে না থাকলেও আসামী হয়েছেন তাবিথ আউয়াল।
নেতারা জানান, গত ২৬ অক্টোবর দেশে সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে মিছিল করার কথা থাকলেও তা করেনি বিএনপি। তার ওপর সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে মিছিল না করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর ফেরার পথে একটি মিছিল থেকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ব্যানারের লাঠি ছুঁড়ে দেওয়ার ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর পুলিশেরা করা মামলায় অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাহেরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন,২৬ অক্টোবর আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। নাইটিংগেল মোড়ের দিকে একটু এগোতেই দু’পাশ দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে।’
যদিও সেদিন পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি এনামুল হক মিঠু বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের উপর অতর্কিতে উসকানিমূলক আচরণ করে।
দায়িত্বশীল একজন বলেন, ‘প্রত্যেকটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মামলা হচ্ছে। অসংখ্য নেতাকর্মী মামলার আসামী হচ্ছে। এ বিষয়টি নেতৃত্বের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় কোনও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এই আচরণে এখন দলের নেতাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’
গত ২৬ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)
গত ২৬ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)
দলের ঢাকা মহানগরের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণনেতা বলেন, ‘এখন থেকে দলীয়ভাবেও ‘স্যাবোটাজ’ করার প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের সচেতন করা হবে। বিশেষ করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে কর্মসূচি বিনষ্ট করার যেকোনও প্রয়াস মোকাবিলায় ‘বিশেষভাবে দক্ষ নেতাকর্মীদের’ দায়িত্ব দেওয়া হবে।’
দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে যেকোনও প্রোগ্রাম দিলেই পোশাকে বা পোশাকহীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। গতকাল বুধবার (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নেতাকর্মীরা শান্তিতে বিশ্বাসী। তারা ঘুড়ে দাঁড়ালে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
যদিও ‘বিএনপি কর্মসূচির নামে কোনও সন্ত্রাস ও জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে’ বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা মহানগর বিএনপির (দক্ষিণ) আহ্বায়ক আবদুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেকেই বলে থাকে বিএনপি মাঠে নামছে না,কর্মসূচি দিচ্ছে না। দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে বিএনপি কর্মসূচি দিলে সরকারের আচরণ কী হয়। বিএনপি সম্প্রীতি রক্ষার একটি মিছিল করবে,সেটিও করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী’।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম আরও বলেন, ‘সরকার যত কিছুই করুক, বিএনপিকে থামাতে পারবে না। বিএনপি আগাবে। যত মামলায়ই হোক,নির্যাতনই হোক, নেতাকর্মীরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। গত ১২ বছর ধরে নিপীড়ন চলছে, বিএনপির অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি।’
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলা বলছেন, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলেও হঠাৎ করে ‘স্যাবোটাজ’ হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে পুরো বিষয়টি এখন নেতৃত্বের জন্য পীড়াদায়ক। ২৬ অক্টোবর সকাল ৮টার আগে থেকেই নয়া পল্টনমুখী সবগুলো গলিতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির সদস্যরা অবস্থান নিয়ে অনেককেই আটক করে।
দলীয়সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ একাধিক সদস্য নিজেদের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দল হিসেবে কর্মসূচি ছাড়া একটি দল চলে কীভাবে, এমন প্রশ্নও এখন দলটির নেতাদের চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এইভাবে কর্মসূচি দিলেই হামলা-মামলা বিষয় উপস্থিত হলে তার বিকল্প কী করা যায়, সেই চিন্তাও এখন নেতাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু এভাবে পুলিশ আচরণ করেনি। পুলিশ নিজেদের পোশাকে বা পোশাক ছাড়া দলীয় কর্মসূচিতে হামলা করছে। ১৫ মিনিটের একটি কর্মসূচিকে তারা ঘন্টাখানেকের রণক্ষেত্রে পরিণত করছে। নিশ্চয়ই এটা আমাদের ভাবায়, অবশ্যই ভাবায়।’
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ আরও বলেন, ‘ছেলেরা এখন কর্মসূচিতে এসে পুলিশের হামলার মুখোমুখি হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই ভয় কেটে যাবে। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। পুলিশ বা আইজিপিকে বুঝতে হবে একদিন দেশ মুক্ত হবে। বিএনপি পিছপা হবে না, কর্মসূচি দেবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন