ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হিন্দু পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলার চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি দেওয়ান আতিকুর রহমান আখি ও আবুল হাসেমকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে আবুল হাসেম নাসিরনগর সদর এবং আখি হরিপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা দুজনই ওই দুটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানও। তারা নাসিরনগর উপজেলা সদরের গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।
চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নাসিরনগর উপজেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ছাড়াও মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের নাম তালিকা প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামে জেলে পরিবারের এক যুবক ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করেছে-এই অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর তাকে পুলিশে দেয় একদল এলাকাবাসী। এই ঘটনার পরদিন এলাকায় মাইকিং করে নাসিরনগর উপজেলা সদরে হেফাজত সমর্থক ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ব্যানারে পৃথক দুইটি প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ওই সমাবেশে দুটিতে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন ও থানা-পুলিশ সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
আরও জানা যায়, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা নাসিরনগর সদরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলায় চালায়। পরবর্তীতে ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও হিন্দুদের একাধিক বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নাসিরনগর থানায় মোট আটটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর গৌরমন্দির ভাঙচুর মামলায় নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম ও হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আখিসহ ২২৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয় পুলিশ।
এবারের নির্বাচনী আমেজ শুরু হওয়ার পর থেকেই হিন্দু পল্লিতে হামলার মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামি আবুল হাসেম ও দেওয়ান আতিকুর রহমান আখি মনোনয়ন পাবেন না বলেই এলাকায় জোর আলোচনা চলছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড প্রকাশিত মনোনয়নপ্রাপ্ত তালিকায় এ দুজন চেয়ারম্যানের নাম দেখে হতবাক হয়েছে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘আমরা জেলা বাছাই কমিটি থেকে তাদের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছিলাম। এরপরও এটি হয়েছে। মনে হয় তাদের মামলার বিষয়টি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উত্থাপিত হয়নি অথবা কেউ গোপন করেছে। কেন্দ্রের দৃষ্টিতে গেলে হয়তো এটি পরিবর্তন হবে’।
নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন বলেন, কেন্দ্র থেকে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আখি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরে হামলার সময় আমি ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। এরপরও আমি আসামি হয়ে কারাভোগ করেছি। কিন্তু আদালত এখনো আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। আওয়ামী লীগের সম্মান-সুনাম নষ্ট হয় এমন কোনো কাজেই আমি জড়িত নই। সফলতার সঙ্গে ৫ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন