বাংলাদেশে গত দেড় বছর ধরে রাজনীতিবিদরা সাইডলাইনে বসে আছেন, দেশ চালাচ্ছেন আমলারা -এমন অভিযোগ জাতীয় সংসদ থেকে চায়ের আড্ডায় সর্বত্রই করা হচ্ছে। আর এই আমলাদের নেতৃত্বে গত দেড় বছরে বাংলাদেশে নজিরবিহীন সমন্বয়হীনতা, ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলায় আমলাতন্ত্রের একের পর এক সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে জটিল এবং কঠিন করে তুলছে বলে অনেকে মনে করেন। এখনো দেশে কাগজে-কলমে লকডাউন চলছে। আমলারা যে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন তা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং মানুষের চিন্তা ভাবনার সাথে সম্পর্কহীন বলেই মনে করা হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে যে কঠোর লকডাউন চলছে এখন তার দ্বিতীয় দফা। আগামী ১৪ জুলাই এই লকডাউন শেষ হতে পারে। কিন্তু এই লকডাউন কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। আজ ঢাকা শহরের রীতিমতো যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা লকডাউন নিয়ে কড়াকড়ি করলেও আস্তে আস্তে তারাও জনসমুদ্রের চাপে একরকম অসহায় অবস্থায় চলে গেছে। তারা এখন আর লকডাউন বা বিধিনিষেধের ব্যাপারে অতটা সক্রিয় নয়।
সাধারণ মানুষ লকডাউনের চেয়ে অর্থনৈতিক লড়াইকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। প্রথম মেয়াদে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভয় আতঙ্ক ছিল সেই ভয় আতঙ্ক এখন মানুষের মধ্যে একেবারে নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। যার ফলে বর্তমান বাস্তবতায় লকডাউনের কৌশল কি হওয়া উচিত সে নিয়ে আমলারা একের পর এক সমন্বয়হীন প্রজ্ঞাপন জারি করছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, মানুষকে জাগাতে, সচেতন করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অংশগ্রহণ দরকার। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যদি রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাহলে লকডাউন সফল হতে পারে। পাশাপাশি লকডাউনের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা -এইসব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কিন্তু আমলারা মাঠের খবর না নিয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। যার ফলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে বিরক্তি তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন যে, সরকার কিসের ভিত্তিতে এ ধরনের জগাখিচুড়ি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? কিন্তু বাস্তবে যে এই সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা নেই, এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কতিপয় আমলা -এটি সাধারন মানুষের অনেকেই জানেন না। যার ফলে এসব ঘটনায় পুরো দায়-দায়িত্ব পড়ছে সরকারের ওপর।
আর এ কারণেই ১২ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা সরকার প্রথম জনগণের আস্থার সঙ্কটে ভুগছে। এই লকডাউন ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে আমলাদের ব্যর্থতার একটা বড় নজির হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দেওয়া ঘর ধসে পড়া। এই ঘর ধসে পড়ার জন্য পুরোপুরি ভাবে আমলাদেরকে দায়ী করা হচ্ছে এবং এ নিয়ে এখন নানা রকম কথাবার্তা বিভিন্ন মহলে উঠেছে। আর এই সমস্ত একের পর এক ব্যর্থতার পর অনেকেই মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী আমলাদেরকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন, দেশের করোনা মোকাবেলার জন্য তিনি প্রতিটি জেলার দায়িত্ব সচিবদেরকে দিয়েছেন, জেলা প্রশাসকদেরকে জেলার কর্তৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু এটির ফলে জনগণের জন্য কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। বরং এ সমস্ত ঘটনা জনগণকে আরো বিরক্ত করেছে এবং জনগণের সাথে সম্পর্ক সরকারের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব তৈরি করেছে। এজন্যই বিভিন্ন মহল মনে করেন যে, এখনই সময় রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনার, রাজনীতিবিদদের দিয়েই করোনা মোকাবেলা সহ সরকারের সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে এই সরকারের ভালো উদ্যোগগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন