নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের বিরুদ্ধে রাজাকার পুত্রের অভিযোগ তুলে গত ২৬ মার্চ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে তার অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা। আজ শনিবার দুপুরে ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানান তারা। এর আগে দিবসটিতে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান বর্জন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরন নবী বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় ডোমার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের বাবা মো. শওকত আলী সরকার, তার দাদা মো. চাটি মামুদ, নানা মো. ছমির উদ্দিনের নাম রয়েছে। ওই তালিকার ১০২৪ নম্বরে ছমির উদ্দিন সরকার, ১০২৫ নম্বরে শওকত আলী সরকার এবং ১০৬১ নম্বরে চাটি মামুদের নাম প্রকাশিত হয়। এমন তালিকা প্রকাশের পর ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদ পতাকা উত্তোলন করলে সে অনুষ্ঠান আমরা বর্জন করি। সে সময়ে আমাদের ওই অনুষ্ঠান বর্জনের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সে ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান থেকে তাকে বিরত রাখার জন্য আমরা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করি। এরপরও পতাকা উত্তোলনে তার (তোফায়েল) অংশগ্রহণের বিষটির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেদিন ওই অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংগ্রহণে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই অনুষ্ঠান বর্জন করেছিলাম আমরা।' এ সময় তোফায়েল আহমেদকে ফ্রিডম পাটি ও জাসদ নেতা ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ওই অনুষ্ঠান বর্জনের বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য বিএনপি শাসনামলের উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং ডোমার থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শমশের আলীসহ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত ওই রাজাকার পুত্রের পক্ষ অবলম্বন করে গত ৩০ মার্চ ডোমার প্রেসক্লাবে একটি মিথ্যা-বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদের বাবা, দাদা এবং নানাকে আওয়ামী লীগ পরিবারের দাবি করা হয়। তাদের দাবির প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা।’
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধ গোলাম রব্বানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল করিম বজু, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ কবির দুলু, ভোগডাবুরি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার কানু, বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিয়ার রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধ নূরুল আমিন নুরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আসাদুজ্জামান চয়নসহ অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘২০১৯ সালের ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমি আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হয়ে অংশগ্রহণ করি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরন নবী আমার কাছে এবং নৌকা প্রতীকের কাছে পরাজিত হন। যারা শেখ হাসিনার নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে অংশগ্রহণ করেন তারা কারা এটা সকলকে নির্ণয় করতে হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হকের বিরোধীতা করেছিলেন তিনি। আমি ৩০ বছর যাবৎ আওয়ামী লীগ করি। বঙ্গবন্ধুর আর্দশের রাজনীতি করি। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ আমি ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমার পরিবারের প্রত্যেকই স্বাধীনতার স্বপক্ষে ছিলেন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরন নবী বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার (নুরন নবী) বিরুদ্ধে কয়েক দিন আগে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, শমশের আলীসহ অন্যান্য সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জানেন আসলে নুরন নবী কে?’ বাবা, দাদা ও নানা কেউ স্বাধীনতা বিরোধী নন এবং তিনি ফ্রিডম পাটি করতেন না, দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন