আব্দুর রহমান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির’ দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ নেতার একজন তিনি। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর মুখোমুখি হন এই রাজনীতিক। তার সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনীতির নানা তথ্য-উপাত্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন।
ব্রেকিংনিউজ: ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিএনপি না আসলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত করা হবে কিনা?
আব্দুর রহমান: আসলে বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, এ কথা ঠিক নয়। তারা রাজনৈতিক পরিচয়টা আনবে না, কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি তাদের জায়গায় থেকেও একাধিক প্রার্থী হবে। আমরা দলীয় যে বাধ্যবাধকতা রেখেছি, যারা মনোনয়ন পাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া যাবে না। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দলীয় আনুগত্যকে বাড়ানো উচিত। তারপরও যদি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো কৌশল অবলম্বন করতে হয়, সেটা দলীয় সিদ্ধান্তে বিবেচনা হবে।
ব্রেকিংনিউজ: ক্ষমতাসীন জোটের অনেকেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চাচ্ছে না। এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
আব্দুর রহমান: আসলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে গোটা জনগোষ্ঠীর কত শতাংশ মানুষের কোন রাজনৈতিক দলের উপরে আস্থা-বিশ্বাস এবং অনুগত থাকে এটা একটা পরিস্কার প্রমাণ হয়ে যায়। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ একটি বিশাল রাজনৈতিক দল, আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ, কর্মসূচি, বা কর্মকাণ্ড মানুষ কতটা পছন্দ করে এই বিষয়টি প্রমাণ করার জন্যই কিন্তু আমরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করি। দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে নির্বাচন করার বিষয় হচ্ছে তাদের দুর্বলতা আছে। তারা মনে করে দলীয় প্রতীকে তৃনমূল পর্যায়ে নির্বাচনগুলোতে অংশ নিলে কত শতাংশ মানুষ ঐ দলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এই দুর্বলতা প্রকাশ পেয় যাবে। এই দুর্বলতা ঢাকার জন্যই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তুলে দেয়ার দাবি করছে।
ব্রেকিংনিউজ: দলীয় প্রতীকের বাহিরে গিয়ে স্থানীয় নির্বাচন হলে কোনো ধরণের সমস্যা হবে মনে করেন?
আব্দুর রহমান: যে বা যারা দলীয় প্রতীকের বাহিরে গিয়ে নির্বাচিত হবে। সে আওয়ামী লীগ মনোভাবপূর্ণ লোক হলেও বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল কখনো কখনো দাবি করতে পারে এ আমাদের লোক। যদি সে রাজনৈতিকভাবে দলীয় পরিচয়ে নির্বাচিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে এই বিভ্রান্তি থাকে না। আমি মনে করি এটি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের একটি ভালো দিক, ইতিবাচক দিক। দলীয় অবস্থানটাও পরিস্কার হবে। আমাদের সকলকেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে উৎসাহ করা উচিত।
ব্রেকিংনিউজ: স্থানীয় নির্বাচনে নৌকায় বিদ্রোহীদের কঠোর হুশিয়ারী দেয়ার পরও সড়ে দাঁড়াচ্ছে না। আবার অনেক জায়গায় স্থানীয় এমপিরা বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আমরা মতামত কি?
আব্দুর রহমান: একজন রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে বড় প্রাপ্তি হলো দলের স্বীকৃতি। একজন রাজনৈতিক কর্মী তার দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ালে কিন্তু তাকে আর কোনো স্তরে মনোনয়ন দিবে না, দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পাবে না। এটা তার জন্য বড় একটা শাস্তি। সুতরাং এই শাস্তিকে মেনে নিয়েই যারা বিদ্রোহী হবে, তাদের ব্যাপারে তো আর কোনো বক্তব্য নেই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপরও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবে; দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। হাত-পায়ে দড়ি-শিকল দিয়ে তো আমরা ঠেকাতে পারবো না। আমরা যে ব্যবস্থাটা নিতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
ব্রেকিংনিউজ: আওয়ামী লীগের অন্যতম ভ্রাতিপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠছে, বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আব্দুর রহমান: এ বিষয়টি আমাদের কাছে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে আসছে। সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়গুলো আমাদের নজরে আনলে, নিশ্চয়ই আমরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। সাধারণ সম্পাদককে তার দায়িত্বে অকারণে হস্তক্ষেপ বা তার কাজ, তার মত করতে না দেয়া, এটা তো ভুল। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলেমিশে কাজ করবে আমরা এটা প্রত্যাশা করি।
ব্রেকিংনিউজ: বিএনপি বিভিন্ন সমাবেশ থেকে সরকার হঠানোর ডাক দিচ্ছে, সে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ কি ভাবছে?
আব্দুর রহমান: এ ক্ষেত্রে আমরা; আমাদের কাজটি করবো। আমাদের আদর্শ, আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি, সাংগঠনিক কাজগুলো করবো, সভা-সমাবেশ করা, কর্মীসভা করা, সম্মেলন করা আমাদের দল ও সরকারের নেতৃত্বে যে অর্জনগু হয়েছে। সেগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরবো। মানুষকে সেসব উন্নয়ন মূলক কাজে সম্পৃক্ত করবো। এগুলো করতে পারলেই বিএনপির আন্দোলন নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে।
ব্রেকিংনিউজ: সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আব্দুর রহমা : আপনাকে এবং ব্রেকিংনিউজ পরিবারকেও ধন্যবাদ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন