শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হারুনুর রশীদ খান ও শিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা (ডানে)
নরসিংদীর শিবপুরে ছাত্রলীগের সভাপতিকে গালাগালের ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা রাজনীতিতে বইছে বিতর্কের ঝড়। সর্বত্র এখন আলোচনায় ভাইরাল হওয়া শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ খান ও শিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার ফোনালাপ।
জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফটিক মাস্টারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো। এ উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এই অনুষ্ঠানে শিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি সকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হয়ে বিকেলে সাবেক সতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ব্যক্তিগত কর্মসূচীতে অংশ নেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। পরে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার ২২ মিনিটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবপুর ছাত্রলীগের সভাপতিকে ফোন করে গালমন্দ করেন। এর একদিন পর গত রবিবার দুপুরে শিবপুর কলেজ গেইট কাঁচাবাজার এলাকায় সোহেলের উপর হামলা চালানো হয়। পরে আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার দু’দিন পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সোহেল রানা ফেসবুক ওয়ালে ফোনালাপের রেকর্ডসহ স্যাটাস দেন। মুহূর্তের মধ্যেই এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
শিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমাকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যেতে বলেছিল। কিন্তু আমি দাঁত ব্যথায় অসুস্থ থাকায় যেতে পারেনি। তাছাড়া আমি সকালে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। পরে অনেকবার ফোন করার পর বিকেলে আমি সেখানে যাই। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার উপর ক্ষুব্ধ হন। পরে ফোনে আমাকে গালমন্দ ও হুমকি দেন। পরে তারা আমার উপর হামলা চালায়। আমি ভুল বা অন্যায় করলে আমার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারতো। ডেকে নিয়ে শাসন করতে পারতো। কিন্তু হামলা কেন?
তবে গালমন্দ ও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. হারুনুর রশীদ খান বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতিকে ছাত্রলীগ করতে হবে। সাবেক সতন্ত্র এমপির মিটিং করবে আওয়ামী লীগের মিটিং করবে না। তা হবে না। যে ছাত্রলীগ নৌকার নির্বাচন করে না, যে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করে না, শুধু মাত্র ডলারের জন্য কাজ করবে, এমন ছাত্রলীগ সভাপতির দরকার নেই। আমি এই কথা বলেছি। সে ছাত্রলীগের কলঙ্ক।
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বস্তাবায়নের জন্য ছাত্রলীগ। আমার বা এমপি বা সাবেক এমপির গুণগান করার জন্য ছাত্রলীগ না। ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কথা বলতে হবে। সে আওয়ামী লীগের দলীয় মিটিংয়ে আসে না কিন্তু সাবেক সতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার মিটিং করে। এটা মানা হবে না।’ হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারী ও অর্থ যেখানে, দ্বন্দ্ব সেখানে। এসব নিয়ে তার উপর হামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঞা রাখিল বলেন, শিবপুর আওয়ামী লীগের অভিভাবক হলেন আলহাজ্ব মো. হারুনুর রশীদ খান। তিনি দলীয় কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকার জন্য সোহেল রানাকে বলেছেন। তিনি দলীয় কর্মসূচীতে না গিয়ে বিকেলে সাবেক স্বতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে গিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। হারুনুর রশীদ খান একজন অভিভাবক হিসেবে আমাদেরকে শাসন করতেই পারেন। তবে সোহেল রানা যে ফোনালাপ ফেসবুকে ভাইরাল করেছেন, তা এডিট করে ছাড়ানো হয়েছে বলে আমি মনে করি। সোহেল রানা কখনো ছাত্রলীগ করেনি। রাতের আঁধারে এই কমিটি করা হয়েছে। শিগগিরই এই অনিয়মিত কমিটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন