স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘দেশ গড়া’ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ গড়ার যে প্রত্যয় ছিল, তা করতে পারিনি। উদার সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা সবাই দলাদলি করেছি, বিভক্ত হয়েছি, কিন্তু সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারিনি। এই দায় আমাদের।’
মঙ্গলবার (০২ মার্চ) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জিয়া শিশু একাডেমি আয়োজিত জাতীয় শিশুশিল্পী প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলাদলি আর বিভক্তির কারণেই উদার ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে ব্যর্থ হয়েছি, এর দায় কোনভাবেই এড়ানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে আমাদের শিশুদের জন্য কি সত্যিকার অর্থে একটা ভালোবাসার দেশ, একটা প্রেমের দেশ, একটা স্বপ্নের দেশ নির্মাণ করতে পেরেছি? তখন নিজের কাছে একটা ঘৃণা আসে, ধিক্কার আসে যে- না, আমরা সেটা করতে পারিনি। আমরা আমাদের শিশুদের জন্য সেই আবাসস্থল তৈরি করতে পারিনি যেখানে তারা নিরাপদে গড়ে উঠবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। আমরা সেই দেশ তৈরি করতে পারিনি, যেখানে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসা, শান্তিময় একটা জগত হবে।’
তিনি বলেন, ‘সকলের কাছে আমার আহ্বান থাকবে যে, আসুন আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নেই, চেষ্টা করি, আমরা আমাদের শিশুদের জন্যে একটা সত্যিকার অর্থেই শান্তিময় নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলি, একটা প্রেমের জগত গড়ে তুলি। আসুন আমরা সবাই মিলে এই বাংলাদেশটাকে সত্যিকার অর্থেই হাসি-গান আর ফুলের একটা দেশ বানিয়ে তুলি। এটাই হোক আমাদের লক্ষ্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অনেক বয়স হয়েছে। আমরা কিছু পরে হয়ত পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। এই সময়ে কোভিডের মধ্যে আমাদের অনেক গুণী মানুষ চলেও গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখে যেতে চাই, সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ শিশুদের জন্য সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক, সত্যভিত্তিক এক দেশ হয়েছে। দেশ হয়েছে আনন্দময়-প্রেমময়। শিশুদের মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যত দেখতে পাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘র বার করে আমার মনে হয় যে, শিশুদের জন্য সুন্দর ও নিরাপত্তা এক আবাসস্থল না করতে পারায় দায় আমাদের। আমরা যারা এদেশ স্বাধীন করেছিলাম, লড়াই করে যুদ্ধ করে আমরা যারা কথা দিয়েছিলাম যে, এই দেশকে একটা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো, এই সমাজ এই রাষ্ট্রকে সহনশীল, উদার রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করবো, আমাদের দুর্ভাগ্য- পুরোপুরিভাবে সেটা আমরা করতে পারিনি।’
একাত্তরের স্বাধীনতার স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ বছর আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূরণের বছর, এই মাসটা স্বাধীনতার মাস। এই মাসে বাংলার মানুষেরা আমরা পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করবার জন্য যুদ্ধে নেমেছিলাম। সত্যিকার অর্থে যুদ্ধ কিন্তু! কোনো খেলা খেলা যুদ্ধ নয়।’
তিনি বলেন, ‘সেই যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যার নামে এই প্রতিষ্ঠান। তিনি ওই সময়ে সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন। তারপরে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে, বহু মানুষ মারা গেছে, বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে, প্রায় ১ কোটি মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। এখানে গণহত্যা হয়েছে। সেনাবাহিনীর লোকেরা বহু প্রথ্যাত শিল্পীকে হত্যা করেছে। এখন সময় এসেছে, ৫০ বছরে আমরা কী পেয়েছি আর কী দিয়েছি সেই হিসাব কষার।’
শিশুদের উন্নয়ন ও বিকাশে জিয়াউর রহমানের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে টেলিভিশনে ‘নতুনকুঁড়ি’ অনুষ্ঠান চালুর কথাও তুলে ধরেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো ‘নতুনকুঁড়ি’ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অনেক অনেক শিল্পী নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আমি জানি অনেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে গিয়ে মন্ত্রীও হয়েছেন। এটা যখন বন্ধ হয়ে যায় তারপরেই জিয়া শিশু একাডেমী ও শাপলাকুঁড়ি প্রতিযোগিতা শুরু হয়।’
কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জিয়া শিশু একাডেমীর উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১১তম জাতীয় শিশুশিল্পী প্রতিযোগিতা ‘শাপলাকুঁড়ি-২০১৯’ এর পুরস্কার বিতরণীর এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মির্জা ফখরুল শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এই শিশু প্রতিযোগিতায় সারা দেশে ২২ হাজার ক্ষুদে শিল্পী বাছাই পর্বে অংশ নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৭৬ জন।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শিক্ষায় অধ্যক্ষ সেলিনা আখতার, স্বাস্থ্যসেবায় অধ্যাপক হাসিনা আফরোজ, সঙ্গীতে এএসএম শফি মন্ডল, শিল্পায়নে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রবাসী কল্যাণে খান মনিরুল মনি, জনপ্রতিনিধি মনিরুল আলম সেন্টু ও আদর্শ মা মৌসুমি সাহাকে ‘কমল পদক-২০২০’ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে ক্ষুদে শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
সংগঠনের নির্বাহী মহাপরিচালক এম হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এবং মাশুক সিদ্দিকী ও নওশিন রথির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে একাডেমীর পৃষ্ঠপোষক এলবার্ট পি কস্টা, কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলম, জিনাত রেহানা, সামিনা আখতার সম্পা ও সুলতানা জামান জ্যোস্না বক্তব্য রাখেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন