নানাভাবে চাপে থাকা বিএনপি কোনোভাবেই মাঠের আন্দোলন বেগবান করতে পারছে না। কয়েকটি ইস্যুতে ইতোমধ্যে তারা কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে এসব কর্মসূচি সফল করতে দলটি কী ধরণের কৌশল বা অবস্থান নেবে। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দলটির ভাবনা, ‘নির্যাতন-হামলা মামলা-গ্রেপ্তার’- যাই হোক ‘শান্তিপূর্ণ’ উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সরকারের ছুড়ে দেওয়া ইস্যুতে না গিয়ে সুনির্দিষ্ট দাবিতে বিশেষ করে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে মাঠে থাকবে দলটি। প্রথম দিকে কঠোর না হয়ে ঢাকাসহ দেশের সব মহানগর-জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দেবে তারা। এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি দলের ভেতরেও কৌশলী হওয়ার কথা ভাবছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলন-কর্মসূচিতে যেসব নেতা ভালো ভূমিকা রাখবেন, যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের দলের পদপদবির জন্য বিবেচনা করা হবে। বিস্তারিত আলোচনা শেষে গত শনিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। জিয়াউর রহমানের
বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। এতে পুলিশের লাঠিচার্জে শতাধিক নেতাকর্মী আহত এবং ঘটনাস্থল থেকে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি দলটির। এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে গিয়ে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির নেতারা বলেন, শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে এমন পুলিশি হামলা হতে পারে, তাদের ধারণাও ছিল না। নেতারা মনে করেন, সমাবেশে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি এবং আল জাজিরাসহ বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পতনের শঙ্কায় পড়ে গেছে সরকার। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারতেই এ হামলা চালানো হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বুধবার বরিশাল বিভাগ ছাড়া সারাদেশে মহানগর ও জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করা হবে। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ধাপে ধাপে নানা কর্মসূচি করা হবে।’ এ ছাড়া সম্প্রতি পাঁচ বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ সিটির মেয়রপ্রার্থীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা গাড়িবহর নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন। একাধিক জায়গায় পথসভা করারও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি। এ বিষয়ে এক নেতা জানান, সমাবেশ ছাড়াও নানা ইস্যুতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন রাজধানীসহ সারাদেশের মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। আন্দোলন কর্মসূচিতে যেসব নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন তাদের দলীয় পদপদবিতে মূল্যায়ন করা হবে। শুধু তাই নয়, সরকারে বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নতুন কমিটি হয়েছে সেগুলো নেতারাও কী ভূমিকা রাখে তাও বোঝা যাবে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুর থেকে বলেন, ‘জনগণের অধিকার আদায়ে আমরা তৎপর আছি এবং থাকব। দলকে সংগঠিত করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এর অংশ হিসেবে আমরা বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যতে আমাদের এ আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে। আশা করি আমাদের দাবির সঙ্গে সব শ্রেণিপেশার মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করবেন।’
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১৮ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ হবে বরিশালে, খুলনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাজশাহীতে ১ মার্চ, ঢাকা মহানগর উত্তরে ৩ মার্চ এবং দক্ষিণে ৪ মার্চ। প্রথম সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল গত শনিবার চট্টগ্রামে। কিন্তু ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ থাকায় একদিন আগে বৃহস্পতিবার রাতে সেটি স্থগিত করা হয়। ২০ অথবা ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি হাইকমান্ড মূলত মেয়রপ্রার্থীদের সামনে রেখে সমাবেশ সফল করতে চাইছে। সে অনুযায়ীই বিভাগীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কেন্দ্র থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও সমাবেশগুলোতে যোগ দিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। কর্মসূচিকে সুশৃঙ্খল করতে মঞ্চে প্রধান অতিথি, সভাপতি ও ছয় সিটি মেয়রপ্রার্থীসহ অল্প কয়েকজনকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে নানা ইস্যুতে দেশব্যাপী ইতোমধ্যে তিন দফায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। ৪ মার্চ পর্যন্ত ছয়টি সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে আরও কর্মসূচি দেবে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের মহানগর ও জেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করেছে। গত শনিবার ঢাকাসহ দেশের সব মহানগর এবং গতকাল সব জেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সাহসের সঙ্গে পথ চলতে হবে। অনেকে বলে আমাদের ব্যস্ত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটার পর একটা আইটেম দেয়। কিন্তু আমাদের এখন ব্যস্ত থাকার দরকার নেই, অনেক আইটেমও নিয়ে মাথা ঘামানোরও দরকার নেই। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে এ সরকারকে গদি থেকে নামিয়ে নিতে পারি সব চুকে যাবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন