১৯৯০ সালের এই দিনে বাংলাদেশে প্রথম তত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা স্বীকৃতি পেয়েছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর ৯০ এ বাংলাদেশে তত্বাবধায়ক সরকার যাত্রা শুরু করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠনের ব্যবস্থাটির ধারণা প্রথম উপস্থাপন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ভোট কারচুপি বন্ধ এবং মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মূল চেতনা ছিলো যে, নির্বাচন কালীন সময়ে একটি দল নিরপেক্ষ সরকার দেশ পরিচালনা করবে। তাদের প্রধান কাজ হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা। ৯১, ৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে, এরকম একটি সরকারের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতি সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। ৯০ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও, বিএনপি ৯৬ এর নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখতে অস্বীকৃতি জানায়। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আবার আন্দোলন শুরু করে।
৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি গণদাবী উপেক্ষা করে, দলীয় সরকারের অধীনে ভোটার বিহীন নির্বাচন করে। কিন্তু ঐ নির্বাচনের পর বিএনপি একমাত্র ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তারা পদত্যাগে বাধ্য হয়। এরপর বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে ৪টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনে পরাজিত দল নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরাজিত দল সব সময় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জাামত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে। প্রধান বিচারপতির চাকরীর বয়স সীমা বাড়িয়ে কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করার নীল নকশা তৈরী করে বিএনপি জামাত। এর ফলে পুরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই প্রশ্ন বিদ্ধ হয়।
মূলত: এখানেই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কবর রচিত হয়। ওয়ান-ইলেভেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষত উন্মোচন করে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গর্ভে অনির্বাচিত সরকার জন্ম দিতে পারে। এর মাধ্যমেই অবসান হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন