স্বৈরাচারের পতন ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে কথা বলেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা),র চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
বাংলা ইনসাইডার: ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস, গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস, আপনি কীভাবে দেখেন?
জি এম কাদের: আমি এভাবে দেখি না। আমি মনে করি সে সময় যারা আন্দোলন করেছেন তারা হয়তো কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করেছেন। কিন্তু ফলাফল যেটা হয়েছে সেটা হলো গণতন্ত্রের অবসান হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের মোড়কে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার: এমনটা মনে হওয়ার কারণ যদি বলতেন?
জি এম কাদের: তখন সাংবিধানিক সরকার ছিলো, সেই সকার পদত্যাগ করে চলে গিয়েছিলো। তারপর নির্বাচন হয়েছে এবং সরকার গঠিত হয়েছে। যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলে যে ৭০ ধারা দিয়েছে তাকে আর সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বলা যায় না। যেখানে সংসদ হওয়ার কথা ছিলো সকল সমস্যা সামাধানের কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু ৭০ ধারার কারণে সংসদ নিয়ন্ত্রিত হয় সরকারের দ্বারা। কিন্তু হওয়ার কথা ছিলো সরকার নিয়ন্ত্রিত হবে সংসদের দ্বারা। যেখানে সরকার সংসদ নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম হয় না।
বাংলা ইনসাইডার: জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি কি মনে করেন ৭৫ পরবর্তী বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় আসার ধারার চির অবসান হয়েছিলো ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ এশাদের পতনের মধ্য দিয়ে?
জি এম কাদের: গণতন্ত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে জনমত থাকে তার বাইরেও মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকে। কোনো পরিবর্তন জনগণের ইচ্ছায় হলে সেটা টিকে থাকে আর ইচ্ছার বাইরে হলে সেটা টিকতে পারে না। সে কারণে আমি মনে করি, ৭৫ এর পরে যা হয়েছে তার সাথে এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ বা ত্যাগের কোনো সম্পর্ক নেই। কেন না জনগণের প্রত্যাশা ছিলো তখন পরিবর্তন করা বাধ্য হয়ে এসেছিলো।
বাংলা ইনসাইডার: হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ কি বৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করেছিলেন?
জি এম কাদের: আমি বৈধ বলতে পারবো না এই কারণে যে, আইনগতভাবে বলা হয়েছে এটা অবৈধ। তবে কতটুকু বৈধ সেটাও বলা হয়েছে। ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বরের পরেরটা বৈধ বলা হয়েছে। আইনগত বা সাংবিধানিক বৈধতার বাইরেও জনগণের একটা বৈধতার ব্যপার থাকে। জনগণ যদি কোনোকিছু গ্রহণ করে তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেটাই বৈধ। যেকোনো আন্দোলন সংগ্রাম, পরিবর্তন সাধারণত নিয়মকে ভেঙেই করা হয়। পরবর্তীকালে মানুষের গ্রহণযোগ্যতার কারণে সেটা বৈধ হয়।
বাংলা ইনসাইডার: এরশাদ একমাত্র ব্যক্তি যিনি স্বৈরশাসক হয়েও স্বাভাবিকভাব মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং পতনের পর জনপ্রতিনিধি ছিলেন, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতাও ছিলেন এর রাজনৈতি বিশ্লেষণে কি বলবেন আপনি?
জি এম কাদের: এরশাদকে স্বৈরাচার গায়ের জোরে বলা হয়। তিনি স্বৈরাচার ছিলেন এরকম কোনো সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই। এরশাদ গণতান্ত্রিক পন্থায় দেশ পরিচালনা করেছেন। কিছুটা সংবিধানের বাইরে করলেও কিছুটা সংবিধান মোতাবেগই করেছিলেন এবং তিনি যা করেছেন সব জনকল্যাণে করেছেন। আর এ কারণেই তিনি জনগণের দ্বারা কোনোদিনই প্রত্যাখ্যাত হননি। যখনই নির্বাচন কিংবা জনমতে গেছেন তখনই জনগণ তাকে গ্রহণ করেছেন। তিনি স্বৈরাচার চিলেন না এবং তাকে অপসারণ করা হয়নি। তিনি নিজেই চলে গেছেন একটি চুক্তি করে। কিন্তু সেই চুক্তিনামাকেই চুক্তিকারীরা পরবর্তীতে মেনে চলেনি, চুক্তি ভঙ্গ করেছে। পরবর্তীতে যে সরকার বা পদ্ধতি গঠিত হয়েছে সেটাকে গণতান্ত্রিক বলা যায় না।
বাংলা ইনসাইডার: এই ব্যবস্থাকে কেন গণতান্ত্রিক বলা যায় না?
জি এম কাদের: আমরা সংসদীয় পদ্ধতির সরকার তৈরি করলাম কিন্তু সংসদকে কোনো ক্ষমতা দিলাম না। কথা ছিলো সংসদ সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। ফলে এক জনের বাইরে কোনো কিছু করার ক্ষমতা সংসদের নেই। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং সাংবিধানিক জোড়ে আমরা একটা একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি করছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন