এরশাদ-পরবর্তী জাতীয় পার্টি টিকে থাকবে কি না রাজনৈতিক মহলে এমন প্রশ্ন ছিল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর নেতৃত্বের শীর্ষ পদ নিয়েও জাপায় কোন্দল দেখা দেয়। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলের নবম ও সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘চিফ প্যাট্রন’ নামে একটি পদ সৃষ্টি করে ওই পদে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে বসানো হয়। চেয়ারম্যান করা হয় এরশাদের ভাই জি এম কাদেরকে। এভাবে সংগঠনকে বিভক্তির কবল থেকে রক্ষা করা হয়। তবে ভেতরে ভেতরে বিরোধের একটি সুপ্ত ধারা এখনো বহমান।
নবম সম্মেলনের পর রওশন এরশাদকে সংসদে উপস্থিতি বাদে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। কর্মকাণ্ডের দিক থেকে দলটি এখন মূলত জি এম কাদের নির্ভর। সংগঠনের চেয়ারম্যান হওয়ার পর কাদের তাঁর পার্টিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি স্বতন্ত্র পরিচয়ে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা তিনি কতটা পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে অনেকের।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর কিছুদিন পর এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক দল গঠন করলে বিএনপির অনেক নেতা, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীরা যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেখা যায় বিএনপির তৃণমূলের সমর্থন আওয়ামী লীগের দিকে নয়, গিয়েছিল এরশাদের দিকে।
[১] শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নাইন ইলেভেনের নিহতদের স্মরণ করলো নিউ ইয়র্ক ≣ করোনাকালে সেই ইঁদুরের কথা মনে পড়ছে! ≣ [১] নেশন্স লিগে প্রথম জয়ের স্বাদ পেলো জার্মানি
আবার বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা এরশাদের পতনের পর সহজেই বিএনপিতে ফিরে জায়গা করে নেন, এমনকি বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রিত্বও পেয়ে যান। অতীতে দেখা গেছে আওয়ামীবিরোধী ধারায় যে সংগঠনটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে, আওয়ামী চেতনাবিরোধী অন্যান্য ছোটখাটো দলের অনুসারীদের সমর্থনও গেছে সেদিকেই।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলছেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন দলের প্রধান বিরোধী দল হতে চায়। কিন্তু আওয়ামীবিরোধী সব শক্তির সমর্থন ছাড়া তা হওয়া কি আদৌ সম্ভব? বিএনপির নেতৃত্বের সংকটকে জাতীয় পার্টির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক পথ হিসেবে দেখছে জাপা নেতৃত্ব। তবে এখানে বাধা হচ্ছে—আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সুসম্পর্ক, জোটবদ্ধ নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদে তাদের প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন না করা।
গত শনিবার জি এম কাদের দলীয় কর্মীদের একটি সভায় বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেছি বলে আওয়ামী লীগে বিলীন হয়ে যাইনি। আমাদের নিজস্ব রাজনীতি ও আদর্শ রয়েছে।’ বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে জি এম কাদের দুর্নীতি, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রকৃত বিরোধী দলের মতো জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। তবে আওয়ামীবিরোধী সমর্থন নিজেদের কাছে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এতটুকু যথেষ্ট মনে করছেন না পার্টির অনেক নেতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় পার্টির সম্ভাবনা থাকলেও তাদের এগোনোর পথ সরল নয়। সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে জনতার চাহিদা অনুসারে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা খুবই কঠিন কাজ। তবে পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ মনে করেন, ‘জাতীয় পার্টির এগিয়ে যাওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি এখন রাজনৈতিকভাবে দিশাহারা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এরশাদের আদর্শ ও ইসলামী মূল্যবোধ সামনে রেখে এগোতে চাই। সেভাবেই আমরা হাঁটছি।’
জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, রাজনীতির জায়গা শূন্য থাকে না। দেশের রাজনীতির গতিও বদলেছে। মানুষ এখন হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না। গঠনমূলক বিরোধিতা চায় মানুষ। বিএনপি সেটা দিতে পারছে না। এ সুযোগটি জাতীয় পার্টির রয়েছে। গ্রামে বহু মানুষ রয়েছে এরশাদভক্ত। তাদের এক জায়গায় আনতে পারলে জাপা ভালো করবে। জাপা ব্যর্থ হলে ওরা অন্যদিকে যাবে। এটা ঠিক, আওয়ামীবিরোধী দুটি দল কখনো শক্তিশালী হবে না, একটাই হবে।
জি এম কাদের বলেন, দেশের মানুষ একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক বিকল্পের প্রত্যাশা করছে, যেখানে হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও নেই; রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি নেই। নানা কারণে সরকারের কিছু ভুলভ্রান্তিতে অনেক মানুষ বীতশ্রদ্ধ। তারা একটি জায়গা খুঁজছে, আবার বিএনপির নেতৃত্বদানের অপারগতা ও হঠকারিতা মানুষ মেনে নিতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি হতে পারে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি।
কাদের বলেন, ‘এরশাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা, আমাদের সংগঠন এবং ইতিবাচক রাজনীতি এগিয়ে নিতে পারে। জাতীয় পার্টির নিজস্ব আদর্শ রয়েছে, স্বকীয়তা রয়েছে। আমরা নিজস্ব পথে হেঁটেই সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চাই। জন আস্থা অর্জন করতে চাই।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন