করোনাকালেও রাজনীতির বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুজে পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। বাংলাদেশ যখনই কোন জাতীয় সংকটে পড়ে তখনই রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে মনে করছেন তারা। বর্তমান করোনা সংকটকালেও সেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ বাতাসে পাওয়া যাচ্ছে মত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
রাজনীতিতে বিরাজনীতিকরণের অশুভ শক্তি হিসেবে বিএনপি-জামায়াতসহ আরও অনেককেই দায়ী করছেন তারা। তাই এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন টানা মেয়াদে সরকার থাকা আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার ( ১৬ জুলাই) আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবসের দিনটিতে সেই অতীত ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, শেখ হাসিনাকে বন্দী করে গণতন্ত্রকে বন্দী করা হয়েছিল। এই বন্দী করে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারকে বন্দী করা হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা ওই কারাগারে রেখেও তাকে দমাতে পারে নাই। তিনি কারাগার থেকে যখনই চিকিৎসার জন্য বেড়িয়েছেন, তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন; 'একমাত্র নির্বাচনই হল সরকার পরিবর্তনের পথ। আমি নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন কিছু মানি না। বাংলার জনগন মানবে না।'
নেতাকর্মীদের অবদান ও ত্যাগের কথা স্মরণ করে নানক বলেন, বাংলাদেশ সেদিন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে মুখোমুখি হয়েছিল। বাংলাদেশ সেদিন যে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে পরেও বাঙালি জাতি আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু প্রেমিক নেতাকর্মীরা সেদিন আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতি হল মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি লাভ।
আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, কোন অশুভ চক্রান্ত কখনোই সফল হতে পারে না; যদি না সেটা মানুষের জন্য রাজনীতি না হয়ে থাকে। কারাবন্দি শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণেই সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাহস পেয়েছিল এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করে প্রিয় নেত্রীকে মুক্তির পথ প্রশস্ত করেছিল।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, করনোকালীন বিএনপি-জামায়াত এবং কুশীলবরা তারা কোনোভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। কোন অত্যাচার নির্যাতন গ্রেপ্তার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে দমাতে পারে নাই। তাদের পথ রুদ্ধ করতে পারে নাই। ভবিষ্যতেও কোনো চক্রান্ত কোন ষড়যন্ত্রই আওয়ামী লীগের এই পথ চলাকে, শেখ হাসিনার এই অবিরাম পথ চলাকে কেউ রুখতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এখনো আমরা দেখছি, আমরা বুঝতে পারছি যখনই বাংলাদেশের মানুষ সংকটে পড়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং দেশকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর তার পাশাপাশি একটি কুচক্রী মহল যখনই এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় তখনই তারা ষড়যন্ত্র করে। তখনই তারা নানান ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
নাছিম বলেন, যখন আমরা দেখি এ দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য সমস্ত শক্তি মেধা দিয়ে প্রণোদনা দিয়ে দেশের মানুষকে জাগিয়ে তোলার আশায় আলোকিত করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছে, তখন ষড়যন্ত্রকারীরা নীলনকশা করে এই দুরবস্থার ভিতরেও। তারা রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আজকে আমরা দেখি রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ সেখানে কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ের মিডিয়া মোঘল থেকে শুরু করে নানান পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ের লোকজনের সাথে ওই কুচক্রী মহলদের নানান ভাবে সম্পৃক্ত। তাদের বিষয়টি কিন্তু আলোচিত হয় না, সমালোচিত হয় না। তাদের বিষয়টি দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয় না।
আওয়ামী লীগে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং গণতান্ত্রিক শক্তির পূজারী যারা তাদেরকে চরিত্র হনন করার জন্য, তাদেরকে বিকৃত করার জন্য, খাটো করার জন্য রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতিকে খাটো করে বিতর্কিত করে আবারও সেই বিরাজনীতিকরণের অশুভ শক্তি বিএনপি-জামায়াতসহ আরো অনেক অপশক্তি নানান ভাবে সক্রিয় হয়েছে।
এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সজাগ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সজাগ আছে। সক্রিয় আছে। কোন ষড়যন্ত্রই কোন ধরনের অপপ্রচার অথবা বিরাজনীতিকরণের যেকোন অপকর্মকে আমরা প্রতিহত করবো। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েই যাবো।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে সীমিত পরিসরে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন