সিরাজগঞ্জ শহরের এসএস রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার বিকেলে জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
এতে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হকসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এনামুল হক বিজয় হত্যার ঘটনার জের ধরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। এ সংঘর্ষের কারণে শহরের এস. এস. রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ কেরে দেয়। খবর পেয়ে সদর থানা-পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কমপক্ষে ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর থেমে থেমে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
সূত্র জানায়, এই দোয়া মাহফিলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ এবং জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাসসহ জেলা নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। দোয়া মাহফিল শুরুর আগমুহূর্তে জেলা ছাত্রলীগের অপর একটি গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় অন্যান্য নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। টানা ৪ ঘন্টা এ সংঘর্ষে শহরের এসএস রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, সদ্য প্রয়াত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের রুহের মাগফেরাত কামনায় এ দিন বাদ আসর জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ছাত্রলীগ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। আসর নামাজ শেষ না হতেই দলীয় কার্যালয়ের পেছনে থাকা কতিপয় উশৃঙ্খল নেতাকর্মী হট্টোগোল শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে গেলে এ কর্মসূচি তাড়াতাড়ি শেষ করে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলীয় অফিস থেকে চলে আসি।
তিনি আরো বলেন, এনামুল হক বিজয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আমরাও গভীর শোকে শোকাহত। কিন্ত এ ঘটনায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাতের বিষয়টিও অনাকাঙ্খিত।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনার পর শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ফোরকান শিকদার বলেন, দলীয় কার্যালয়ে সদ্য প্রয়াত জেলা ছাত্রলীগ নেতা বিজয়ের রুহের মাগফেরাত ও দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে উভয়পক্ষ কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করলেও শহরে উত্তেজনা রয়েছে।
এদিকে, সিরাজগঞ্জ-২(সিরাজগঞ্জ সদর-কামারখন্দ) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত মুন্না মঙ্গলবার বিকেলে এনামুল হক বিজয়ের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা, মা, ভাই, বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে দেখা করে করে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের দোয়া মাহফিলে যোগদান করতে এসে গত ২৬ জুন সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় জেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক এনামুল হক বিজয় গুরুতর আহত হন। ৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর গত রবিবার দুপুরে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জের ধরে এ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন