প্রায় ২৫ মাস পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন ২ মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। মুক্তির ফাইলে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করার পর এবং বিধিবিধানগত প্রক্রিয়া শেষে গতকাল বিকেল সোয়া ৪টায় ৬ মাসের মুক্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে গুলশানে নিজ বাসা ফিরোজায় যান বেগম জিয়া। তবে দেশজুড়ে চলমান করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে বাসায় আগামী ১৪ দিন তিনি হোম কোয়ারেনটাইনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাত ও কুশল বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডগঠন করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ইতোমধ্যে তাঁর বাসায় আছেন। তাঁর সঙ্গে ডাক্তাররা আলোচনা করছেন। আপাতত কিছুদিনের জন্য ম্যাডামকে হোম কোয়ারেনটাইনে রাখা হবে। এই সময়কালে ম্যাডামের সঙ্গে যাতে কেউ দেখা করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
ওই সাক্ষাতে বেগম জিয়ার সঙ্গে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা উনার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক আলোচনা করিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সবাই উনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। শুকরিয়া আদায় করেছেন যে তিনি বাসায় ফিরেছেন। আমরা এটাই উনাকে জানাতে এসেছিলাম যে, তাঁর মুক্তিতে আমরা অনেক খুশি হয়েছিল। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যে এখান থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেন। আবারও রাজনীতিতে আসতে পারেন। এই কথাগুলোই হয়েছে তাঁর সঙ্গে।’
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১ ধারা অনুযায়ী বয়সের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মানবিক কারণে প্রধানত দুই শর্তে বেগম জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শতগুলোর মধ্যে হলো- মুক্ত থাকাকালীন তিনি বাসায় থেকে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা নিতে পারবেন এবং এই সময়ে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলও জানিয়েছেন, মুক্ত থাকাকালীন কোনও শর্ত ভঙ্গ করলে খালেদা জিয়ার মুক্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই সে প্রসঙ্গে যাবো না। আমাদের যারা আইনজীবী আছেন তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন।’
গতকাল স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ফিরোজায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।
এর আগে বেগম জিয়ার দণ্ডের কার্যকারিতা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে মুক্তির আদেশের নথি প্রধানমন্ত্রীর দফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষের হাত বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পৌঁছুলে সব প্রস্তুতি সেরে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর সেখান থেকে গাড়িবহর নিয়ে সরাসরি গুলশানের বাসায় যান তিনি। আপাতত বাসভবন ফিরোজাতেই হোম কোয়ারেনটাইনে থাকবেন তিনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট- এই দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাভোগ করছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গেল বছরের এপ্রিলে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে গত প্রায় ১১ মাস ধরে সেখানেই কারা নজরদারিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন পর নেত্রীর মুক্তিতে সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন