চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রায় চার দশক ধরে। দলটির নেতায় নেতায় প্রবল দ্বন্দ্ব চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এক আলোচিত বিষয়। কখনো কখনো এই বিভক্তি চরম রূপেও হাজির হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে দুপক্ষ গোলাগুলি করেছে। অন্তর্কোন্দলে খুন হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা। চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আসন্ন সিটি নির্বাচনে দ্বিতীয়বার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। নেতাকর্মীরা বলছেন, এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মাধ্যমে তিনি পুরনো দ্বন্দ্বের বিষয়টিই সামনে আনলেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় আ জ ম নাছির দাবি করেন, মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে গিয়ে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই দিন সকালে কয়েকটি অনলাইনে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদের ‘ভাই’ এর সঙ্গে আ জ ম নাছিরের একটি ছবিসংবলিত খবর প্রকাশিত হয়। বলা হয়, ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে দুজন ঘনিষ্ঠ। আ জ ম নাছিরের ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, নগর আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা ওই সংবাদ প্রচারের উদ্যোগ নেন। আ জ ম নাছির উদ্দীন দাবি করেন, রাজনীতি করতে গিয়ে অতীতেও তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তাকে চারবার মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তিনি সরাসরি মহিউদ্দিন চৌধুরী বা তার অনুসারীদের নাম উল্লেখ করেননি।
চার দশক ধরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রধান দুই ধারায় বিভক্ত। শুরুতে এই দুপক্ষের নিয়ন্ত্রক ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১৯৯৩ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে দুপক্ষ গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। ওই দিন বাবু গ্রুপের মোমিন নামের এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হন। সেই সময় আ জ ম নাছির ছিলেন বাবু গ্রুপের ‘প্রধান সেনাপতি’। ওই ঘটনার বাইরেও নগরীর বিভিন্ন কলেজে ছাত্রলীগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে উভয়পক্ষে অন্তত ১০ নেতাকর্মী খুন হন।
জানা যায়, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ১৯৯৪ সালে হুমায়ুন জহির হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক হলে এ গ্রুপের ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি আ জ ম নাছিরের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে ১৯৯৭ সালে বাবু রাজনীতিতে ফিরে এলেও আগের নিয়ন্ত্রণ আর পাননি। তখন তিনি নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে হাত মেলান। কিন্তু তাতেও ফল হয়নি। আ জ ম নাছির দ্রুত গুছিয়ে নিজের অনুসারীর সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। এভাবে নগরীর আধিপত্যের রাজনীতি থেকে সরে যেতে হয় আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের মূল জায়গায় চলে আসেন নাছির। এই সময় নাছিরকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত এমএ মান্নান।
কিন্তু মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর আ জ ম নাছিরের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় মোশাররফের। শেষ দিকে তা ঘুচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন নাছির। অন্যদিকে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষে সবাই কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত ভেতরের বিভক্তি আর মেটেনি। এই বিভক্তির কারণেই আ জ ম নাছির মেয়র পদে দ্বিতীয়বার মনোনয়ন পাননি বলে কথিত রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন