সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দিন থেকে যে অবস্থানে ছিলেন এখন পর্যন্ত সেই অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচনে কোনো রকম প্রভাব বিস্তার করা বা হস্তক্ষেপ করা তিনি সহ্য করতে পারবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন চান শেখ হাসিনা।
নির্বাচনের দুই দিন আগেও তিনি কুলুপ এঁটেছেন। আর নেতা কর্মীদের নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার জন্য কি কি করতে হবে তা বলার চেয়ে বরং নির্বাচনের আচারণবিধি যেন সকলে মেনে চলে, নির্বাচন যেন কোনো ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে ব্যাপারে নজর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়চেতা এবং আশাবাদী মানুষ। তিনি মনে করেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মানুষের জীবন মানের যে উন্নতি হয়েছে, উন্নয়নের যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ চলছে তাতে আওয়ামী লীগকে ভোট না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং বিএনপির দুজন প্রার্থীর ব্যাপারে মানুষের জানা বোঝা উচিত। বিশেষ করে ২০০১-২০০৭ সাল পর্যন্ত বিএনপিন যে দুঃশাসন চালিয়েছে তা মানুষ এত সহজে ভুলে যাবে বলে তিনি মনে করেন না। এ কারণেই নির্বাচন নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন তিনি।
গতকালও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক আলোচনায় বলেছেন, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি নেতাকর্মীদের এটাও বলেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ভোটের অধিকার হরণ করেছিলেন। আর তিনিই বাংলাদেশের ভোট কারচুপির জনক। আর জনগণ তার ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। এরপর মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। সেই সংগ্রামের ধারায় আজ দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি এই ভোটের অধিকারকে সম্মানিত করতে চান আর সরকারি দলের প্রভাব ফেলে ভোটে যেন কেনো রকম কারচুপি না সে ব্যাপারে নজর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রশাসনকে যেমন নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তেমনি দলের নেতাকর্মীদের অযাচিতভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। গতকালও তিনি নেতাকর্মীদের বিএনপি নির্বাচনকে নিয়ে অশান্তি তৈরি করা পায়তারা করছে, সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য বিএনপি অনেক ফাঁদ পেতেছে বলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি উল্লেখ করেছেন। বিএনপির এই সমস্ত ফাঁদে নেতাকর্মীরা যাতে পা না দেয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির মূল লক্ষ্য নির্বাচনে জয় লাভ নয়। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা যা করা দরকার তা সব ব্যাপারেই নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করেছি। এতে এখন নির্বাচনের একটি উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ নিজেরা সেক্রিফাইস করেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে আচারণবিধি দিয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য হলেও আওয়ামী লীগ মেনে নিয়েছে। এজন্য আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রী-এমপি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে না।
অথচ বিএনপির সব সিনিয়র নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে। এসব কিছু মেনে নেওয়ার একটাই কারণে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই মানুষের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি নির্বাচন অশান্ত করতে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং নির্বাচনে সহিংসতা করতে বিএনপি একটা নীল নকশা তৈরি করেছে। আর এই নীল নকশা অনুযায়ী বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা রকম কল্প কাহিনী ও মিথ্যাচার করছে। এজন্য নেতাকর্মীদের অনেক সংযত, সহনশীল ও ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতিও নেতাকর্মীরা যেন বিএনপি উসকানিতে পা না দেয় সেটা লক্ষ্য রাখার কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনার এই অনড় অবস্থানের কারণেই শেষ পর্যন্ত বিএনপির চেষ্টা সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। বরং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতি উপহার পাবে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতারা।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন