বয়সে তরুণ, আছে নির্বাচনের অভিজ্ঞতাও। বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা তাবিথ আউয়ালের ওপরই ভরসা রেখেছে বিএনপি। পেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন। তরুণ এ রাজনীতিক নগরীর দুর্ভোগ লাঘবে দিচ্ছেন আশ্বাস, নির্মল ও নিরাপদ ঢাকা গঠনে দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতিও। জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ঢাকা-কে নিয়ে নিজের ভাবনা, ভোট এবং ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
জনগণ যেমন ঢাকা প্রত্যাশা করেন, জনগণের মতামত নিয়ে তেমন ঢাকা-ই উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তাবিথ আউয়াল। সবার আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়াসহ বায়ু-শব্দ-পানিদূষণ রোধে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের কথা জানান। নারীর নিরাপদ ঢাকা গঠনে নিজস্ব পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খালিদ হোসেন।
জাগো নিউজ : মেয়র নির্বাচিত হলে কেমন ঢাকা উপহার দিতে চান?
তাবিথ আউয়াল : জনগণ যেমন ঢাকা প্রত্যাশা করেন, জনগণের মতামত নিয়ে তেমন ঢাকা-ই উপহার দেয়ার চেষ্টা করব। যেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা এবং সার্বিক উন্নয়নে জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। নগরবাসী কী চান, সেটা আগে শুনব। তাদের মতামত নিয়ে সমাধানের উপায় খুঁজব।
বর্তমানে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫ হাজার লোক বসবাস করে। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধার দেখভাল ও সমস্যা দূরীকরণ বড় বিষয় হলেও তা সমাধানযোগ্য। নগরের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়টি সবার আগে প্রাধান্য দেব। নগরবাসীর উন্নয়নে ধাপে ধাপে প্ল্যান মাফিক আমার কার্যক্রম থাকবে।
জাগো নিউজ : ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত নির্বাচনে মাঝপথ থেকে সরে গিয়েছিলেন। এবার কেন আবার ভোটের মাঠে, শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন কি-না?
তাবিথ আউয়াল : ভোট ডাকাতি, প্রতিটা নির্বাচনেই আপনারা দেখতে পারছেন। বিগত নির্বাচনে আমি একা নই সব প্রার্থীই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। এবার আমরা জেনেশুনে একটা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে যাচ্ছি যেখানে ভোট ডাকাতি তো হবেই পাশাপাশি প্রচারণায় হামলা, মামলারও শিকার হব। এসব বিরূপ পরিস্থিতি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে, আপনারা তা দেখতে পারছেন।
আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থীরা মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন। এতকিছুর পরও শেষপর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়াটা দেখে ছাড়ব। সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, গণতন্ত্র রক্ষার বৃহত্তর যে আন্দোলনে আমরা যোগ দিয়েছি, বিশ্বাস করি এ আন্দোলন বেগবান করতে এ নির্বাচন বড় ভূমিকা রাখবে।
এখানে আমাদের দুটা উদ্দেশ্য সফল হবে। এক, ভোটের অধিকার এবং দুই, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হবে। নির্বাচনে শেষপর্যন্ত থাকা এবং জেতার জন্য অংশ নিয়েছি। এমনটা নয় যে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হাত-পা গুঁটিয়ে বসে থাকব। আমরা পারিপার্শ্বিক সবকিছু মেনে নিয়েই পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে আশঙ্কার জায়গা থেকেই যাচ্ছে।
জাগো নিউজ : বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে অংশ নেয়া কি-না?
তাবিথ আউয়াল : অবশ্যই, আমরা নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে যাচ্ছি। তবে দেশের মানুষের মুক্তির বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়া এবং দেশবাসীর মুক্তির জন্যই বিএনপি এ নির্বাচনে আছে।
জাগো নিউজ : নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেয়েছেন কি-না?
তাবিথ আউয়াল : একদম-ই না। বরং নির্বাচন কমিশনের কিছু বক্তব্য যেমন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে তেমনি আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
জাগো নিউজ : ঢাকা নিয়ে নানা সমস্যা। নির্মল ঢাকা গঠনে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা…
তাবিথ আউয়াল : দেখুন, অনেক প্ল্যানই সিটি করপোরেশনে প্রজেক্ট (প্রকল্প) হিসেবে পড়ে আছে। বাস্তবায়ন নেই। সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে নতুন প্ল্যান করে কোনো লাভ নেই। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেব। কারণ, কয়েক মাস আগে ডেঙ্গুর যে মহামারি আমরা দেখেছি সেটা অত্যন্ত কষ্টকর। এছাড়া জলাবদ্ধতা ও অপরিচ্ছন্নতা- এ দুটা বিষয় ডেঙ্গু বা মশকের প্রজননের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কোথায় কোথায় পানি জমে ডেঙ্গুর লার্ভা জন্মায়, সেসব জায়গায় নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করব। দ্রুত পানি নিষ্কাশন এবং বর্জ্য অপসারণে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাসা-বাড়ি থেকেই যেন বর্জ্য ব্যবস্থাকে আলাদা করে ফেলা যায় সেভাবে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চলাব। এছাড়া ঢাকা শহরের নিয়মিত সমস্যা- বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানিদূষণ প্রতিরোধে মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করব।
আপনি দেখবেন, ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা শহরে অপরাধের মাত্রা না কমে বরং বেড়েছে। অপরাধগুলো নানা সময় নানা নামে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। একসময় বাসে, যাত্রাপথে মলম পার্টির দৌরাত্ম্য আমরা দেখেছি। মানুষ সর্বস্ব হারাত। এরপর সেটি পরিবর্তিত হয়ে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, নাম হয় অজ্ঞান পার্টি। এখন দেখছি ধর্ষণ পার্টি। পথে-ঘাটে, বাসে কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। তাদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে আলাদা বাস এবং রাস্তার মোড়ে মাড়ে নিরাপত্তাকর্মী দেয়া হবে। প্রশাসনের সব বিভাগকে একত্রিত হয়ে অপরাধমুক্ত ঢাকা গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে আমার।
জাগো নিউজ : ভোটার টানতে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা…
তাবিথ আউয়াল : তেমন বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছতে চাই, তাদের ভালোবাসা চাই, সমর্থন চাই।
জাগো নিউজ : এর আগে ‘ভোট ডাকাতি’র কথা বলেছেন। সিটি নির্বাচনে অনিয়ম রোধে আগাম কোনো প্রস্তুতি…
তাবিথ আউয়াল : জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে দুই ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের। এ দুটি দায়িত্ব পালনের জন্যই আমরা এ লড়াইয়ে নেমেছি। নির্বাচনের ফলাফল যে কারণেই হোক যদি আমার পক্ষে না যায়, তার মানে এই নয় যে আমরা নিশ্চুপ হয়ে যাব। রাজনীতিবিদ হিসেবে নগরবাসী, যারা আমাদের পক্ষে আছেন তাদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিচ্ছি সেগুলো বাস্তাবায়নে সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ সৃষ্টি করব।
জাগো নিউজ : যদি অনিয়ম হয় সেক্ষেত্রে কী করবেন?
তাবিথ আউয়াল : নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনরায় যে পক্ষে যাবে সেটা মেনে নেব। তবে যদি কোনো অনিয়ম হয় বা অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসে সেগুলো নিশ্চিত করে দেখব, বুঝব এবং প্রমাণ-সাপেক্ষে আইনি প্রক্রিয়ায় যাব। যেসব আইনি প্রক্রিয়ার সুযোগ থাকবে অবশ্যই আমরা তা ব্যবহার করব।
জাগো নিউজ : তরুণ রাজনীতিবিদ, ভোটাররা কেন আপনাকে ভোট দেবেন?
তাবিথ আউয়াল : রাজনীতিতে তরুণ কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আমি এবং আমার পরিবার সফল। আশা করি ভোটাররা এটি বিবেচনা করবেন। রাজনীতিতেও যে সফল হওয়া যায় সে সুযোগ অন্তত দেবেন। ব্যবসায়ী হিসেবে আমি সফল; কৃষি, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপক কাজ করছি। রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহার সংক্রান্ত একটা ব্যবসা শুরু করেছি। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিং করে নতুন প্রোডাক্ট (পণ্য) তৈরি হচ্ছে। খেলাধুলায় অবদান রাখার চেষ্টা করছি। আশা করি এসব বিষয় নগরবাসী বিবেচনা করবেন।
জাগো নিউজ : গত নির্বাচনে সেনাবাহিনী চেয়েছিলেন। এবার ইভিএম নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তাদের হাতেই। তবুও ইভিএমে কেন আপত্তি আপনাদের?
তাবিথ আউয়াল : আসলে ইভিএমে আস্থা নেই আমাদের। অনেক যুক্তিতর্কের পরও নির্বাচন কমিশন থেকে স্বস্তির আচরণ পাচ্ছি না। ইভিএমের সফটওয়্যার যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা হয়নি তার নিশ্চয়তা কে দেবে? সারাদিন সুষ্ঠু ভোটের পর বিকেল ৫টা ১ মিনিটে যে ভোটের ফলাফল বদলে যাবে না, সেটা কে বলতে পারে? ইভিএমের বাক্সটা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিন্তু ভেতরের সফটওয়্যার তো তাদের হাতে থাকছে না! ভেতরের প্রোগ্রাম ডিজাইনে ভোটের ফলাফল বদলে দেয়ার সিস্টেম চালু রাখা হয়নি, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে আশা করছি, নির্বাচনের আগে কমিশন আমাদের ব্যাপারে আন্তরিক হবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন