রাজধানীর টিকাটুলিতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের পাঁচ কর্মীর একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন- জামিল আহম্মেদ তুহিন, বিল্লাল হোসেন, সোহেল, ফারুক ও আকরাম হোসেন মুন্না।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) আসামিদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ওয়ারী থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক জুলফিকার আলী। অন্যদিকে আসামিদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে এদিন মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করে দিয়েছে একই আদালত।
ঢাকা দক্ষিণের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার দিবাগত (২৬ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেন আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আহমেদ। যদিও এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের লোকজনকে দোষারোপ করেছে বিএনপি।
রোববার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রচার মিছিল যাওয়ার সময় টিকাটুলীর সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীরা। একটি স্লোগানকে কেন্দ্র করে ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ২৬ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন রাজধানীর মতিঝিল ও টিকাটুলীতে নির্বাচনী প্রচার শেষে গোপীবাগের বাসায় ফিরছিলেন। ইশরাকের মিছিল যখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিক কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যাডমিনটন মার্কার রোকন উদ্দিন আহমেদ এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী লাভলী চৌধুরীর কর্মীরা উপস্থিত হন ওই মোড়ে। দুই পক্ষই শ্লোগান-পাল্টা শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময়ে হ্যান্ড মাইকেও ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিতে থাকেন কর্মীরা। একপর্যায়ে একটি স্লোগানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। দুই পক্ষের কর্মীরা এ সময় রাস্তার পাশে থাকা চেয়ারও ছুড়ে মারেন। এর মধ্যে অন্তত ১০টি গুলির শব্দও শোনা যায়। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে শুরু হয়ে ১টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। কয়েকটি গাড়ি এ সময় ভাঙচুরের শিকার হয়। সময় টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম ও নয়াদিগন্তের প্রতিবেদক তৌহিদ ইকবাল মজুমদাম এ ঘটনায় আহত হন।
সংঘর্ষের পর ইশরাক হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন, তাদের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন বিনা উসকানিতে হামলা করেছে। মামলার বিষয়ে পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হান্নানুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে টিকাটুলি এলাকায় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা আওয়ামী লীগের ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা, নৌকাবিরোধী স্লোগান, মারধর ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছেন- এমন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব মাকসুদ আহমেদ মামলা করেছেন। মামলায় ওয়ারী থানা বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ১০০/১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়, গত ২৬ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে ৩৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিন আহমেদ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর লাভলী চৌধুরী ৭০/৮০ জন নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেন। গণসংযোগ শেষ করে ওয়ারী থানাধীন ৪৮/৩/এ আর কে মিশন রোডস্থ রোকন উদ্দিন আহমেদ এর অস্থায়ী নির্বাচন ক্যাম্পে আসেন। জোহরের নামাজের বিরতিতে নামাজের প্রস্তুতি নেন। বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে আসামি শাহ আলমের নেতৃত্বে অপর আসামিরা অজ্ঞাতনামা দুই জন মহিলাসহ ১০০/১২৫ জন অভয় দাস লেন এর পশ্চিম দিক থেকে মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকে। সেখানে এসে তাদের কটাক্ষ করে ‘নৌকা ডোবা ধান লাগা’সহ বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের এ ধরনের শ্লোগান না দিতে অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু আসামিরা শ্লোগান দেয়া থেকে বিরত না হয়ে উত্তেজিত হয়ে লাঠিসোঠা নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করে। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে থাকা অন্যান্য নেতাকর্মীরা এগিয়ে আসলে শাহ আলম ওরফে পারভেজ শিকদার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে থাকা পিস্তল দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ করতে থাকে। অন্যান্য আসামিরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারা আওয়ামী লীগ নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রবেশ করে নেতাকর্মীদের মারধর করে এবং কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। এতে আওয়ামী লীগ কর্মী ইয়াসির আরাফাত রকি মাথায় গুলিবিদ্ধ এবং মোবারক হোসেন সেলিমের ডান হাত গুলিবিদ্ধ হয়। হামলায় কার্যালয়ের কেয়ার টেকার বাবুল মিয়া, মনির হোসেন, সোহবার, আমীর হোসেন কুট্টুর আহত হয়। এছাড়া আরো কয়েকজন আহত হয়।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন