বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে সাজা প্রত্যাহারের দাবিও জানান তারা।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে একটি বিক্ষোভ মিছিল ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের মোড় থেকে শুরু হয়ে স্টার কাবাবের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মিছিল শেষে এক পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রিজভী বলেন, 'ষড়যন্ত্র ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার কর্মসূচি হাতে নেয়। বিগত ১২ বছরে শুধু গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করা হয়নি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেও দুর্বল করা হয়েছে চরমভাবে। আওয়ামী লীগ ঠিকই উপলব্ধি করেছিল যে, প্রতারণার জবাব দিতে দেশের মানুষ পরবর্তী নির্বাচনে আর কখনোই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে না। তাই তারা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিষাক্ত ছোবলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বচ্ছ ভোটকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'ফ্যাসিবাদের গ্রাসে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কায়েম করে দেশের জনগণকে বন্দী করে রেখেছেন সরকারপ্রধান। আর এই ভয়াল সন্ত্রাসের নির্মম শিকার করা হয়েছে এ দেশের কিংবদন্তিসম গণতন্ত্রী, বাক ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার নির্ভীক নেত্রী, গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বন্দী করে। বেগম জিয়ার ন্যায্য জামিন পাওয়ার অধিকারকেই কেবল বাধাগ্রস্ত নয়, বরং শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ চারবারের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে সুচিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তার জীবনবিনাশে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।'
রিজভী বলেন, 'খালেদা জিয়া বেশ কয়েকদিন ধরে বমি করছেন। তিনি খেতে পারছেন না, তার অসুস্থতা আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়েছে। এমনকি বেগম জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকগণও প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন দেশনেত্রীর গুরুতর অসুস্থতার কথা। তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা চরম অবনতিশীল। বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলেও তার শারীরিক অবস্থা গোপন করছে সরকার। বেগম জিয়া হাঁটু ও পায়ের গোড়ালিতে প্রচণ্ড ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে দেশনেত্রীর অসুস্থতা বর্তমানে মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে।'
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, 'বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নীলনকশাই হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া যাতে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কেউ সোচ্চার কিংবা প্রতিবাদী হওয়ার সাহস না পায়। এই মনোবাঞ্ছা পূরণ হলেই শেখ হাসিনার সর্বগ্রাসী হানাদারি শাসন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যাবে।'
রিজভী আরও বলেন, 'যেকোনো মুহূর্তে জনগণের বাঁধ ভাঙা স্রোত বর্তমান স্বৈরশাহীর মূলোৎপাটন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আর নয়, বেগম জিয়ার ওপর যথেষ্ট অমানবিক আচরণ করেছেন, এবার ক্ষান্ত হোন, তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে জনতার ক্রোধ থেকে বাঁচুন। আমি আবারও অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তার পছন্দের হাসপাতালে সুচিকিৎসার সুযোগ দানের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি কারাবন্দী সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন