শ ম রেজাউল করিম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং গণপূর্ত ও গৃহায়ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে প্রথমবারের মত আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। তাঁর পিতা মো. আব্দুল খালেক শেখ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বরেণ্য রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১/১১ পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী সময় থেকেই শ ম রেজাউল করিম জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অন্যতম আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনীতির সাথে একনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
১/১১ এর সময় তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পরে তাকে আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য সর্বপ্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেন শ ম রেজাউল করিম। ছাত্রজীবনে তিনি দৌলতপুর কলেজের ভি.পি ছিলেন। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি (১৯৯০ সন থেকে অদ্যাবধি), সদস্য, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সাধারণ সম্পাদক, ঢাকাস্থ পিরোজপুর জেলা আওয়ামী পরিষদের দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর মুখোমুখি হন এই রাজনীতিক। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনীতির নানা তথ্য-উপাত্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন।
ব্রেকিংনিউজ : আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ও আইনবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কি কি কাজ করতে পেরেছেন?
শ ম রেজাউল করিম : দীর্ঘ পথপরিক্রমা এবং ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন শুধু রাজনৈতিক দল নয়, একটি ইন্সটিটিউশন। আওয়ামী লীগ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তখনই আইনের শাসন বাংলাদেশ থেকে একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দেশকে আইনের শাসনের পথে নিয়ে আসার জন্য কাজ শুরু করেন। আমি আইন সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে চেষ্টা করেছি দল, সরকার এবং রাষ্ট্র যাতে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সবকিছু সম্পন্ন করে সেটা নিশ্চিত করার। সেক্ষেত্রে আইন সম্পাদক হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব এবং আইন উপ-কমিটির সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি।
আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিলো দলের সকল কর্মকাণ্ড যেন আইনসঙ্গতভাবে হয়। দলের সম্মেলন, কর্মী সংগ্রহ এবং দলের বিপথগামী কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নির্বাচন কমিশনে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা, নমিনেশন বোর্ডগুলো যেন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় হয় সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি। কোনও কর্মী বা নেতা যাতে অবিচারের শিকার না হয়, আইন ও পদ্ধতিগতভাবে যেনও বিচার পায়- এসকল বিষয়গুলোকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি দলীয়ভাবে।
ব্রেকিংনিউজ : রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন সম্পাদক হিসেবে কোন কোন বিষয় প্রাধ্যান্য দিয়েছেন?
শ ম রেজাউল করিম : রাষ্ট্রের সকল কিছু যেন আইনসঙ্গতভাবে হয়, কেউ অপরাধ করলে তার বিচার যেন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় হয়, কেউ ক্ষমা পেলেও যেন সেটা আইনের আওতায় আসে সে ক্ষেত্রে আইন সম্পাদক হিসেবে আমি সোচ্চার থেকেছি। আমার কথা বলেছি, সেমিনার করেছি, সিম্পোজিয়াম করেছি, রিপ্রেজেন্টেশন দিয়েছি। কোনও অপরাধমূলক ঘটনা দেখলে আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করে স্টেটমেন্ট দিয়ে তার বিচার দাবি করেছি। কোনও বিষয় আমাদের দলের প্রধানের কাছে উপস্থাপনার মতো হলে, সেখানে বিষয়টা উপস্থাপন করেছি। দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে, দলের সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে এগুলো উপস্থাপনা করেছি।
সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ। বিচারাঙ্গনের সাথে আমি সম্পৃক্ত মানুষ। সে ক্ষেত্রে আমার টার্গেট ছিলো যে, বিচার ব্যবস্থায় যেনও কোনও বেআইনি প্রক্রিয়া বা বেআইনি অবস্থা সৃষ্টি না হয়। সবকিছু যেন আইনসঙ্গতভাবে হয়। কোর্ট অঙ্গনে বিচার প্রার্থীরা বিচার না পাওয়ার কর্মকাণ্ডকে আমরা অ্যাড্রেস করেছি। সেমিনার করে অ্যাড্রেস করেছি, বিবৃতিতে অ্যাড্রেস করেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে অ্যাড্রেস করেছি। তাদের কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানে আমরা কথা বলেছি। আইনজীবীদের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমরা কথা বলেছি। সেখানে আমরা বলেছি, বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা মানে বিচার অস্বীকার করার শামিল। তড়িঘড়ি করে করা মানে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া। আদালত যাতে উভয়পক্ষের কথা শুনে, সে প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। মানুষ যেন আইনের প্রতিকার পায়। এই প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে আইন সম্পাদক হিসেবে, ক্ষমতাসীন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে আমি ও আমাদের আইনবিষয়ক উপ-কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি।
ব্রেকিংনিউজ : যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আইনবিষয়ক উপকমিটির কোনও ভূমিকা ছিলো কিনা, কিংবা কী ছিলো?
শ ম রেজাউল করিম : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিলো যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় সে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আমি ও আমার আইনবিষয়ক উপ-কমিটি ভূমিকা রেখেছি। বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে সেমিনার করা, বিভিন্ন বিষয়ে পত্রিকায় আর্টিকেল লেখা, পার্টির ফোরামে বিষয়গুলো তুলে ধরা, এমনকি ট্রাইব্যুনালের যারা প্রসিকিউটর, তাদের কী করা উচিত সেটাও আমরা বলেছি।’
আবার যখন কেউ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তখন সেই জায়গায় আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ গড়েছি। যারা ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আমরা সেই প্রক্রিয়ায় সেখানে যা যা করণীয় করেছি। আমরা ন্যায়বিচার প্রার্থীদের পাশেও দাঁড়িয়েছি।’
ব্রেকিংনিউজ : সামাজিক অপরাধের বিষয়ে আপনার কী ভূমিকা ছিলো?
শ ম রেজাউল করিম : বাংলাদেশে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমরা সোচ্ছার ছিলাম এবং আছি। শিশুর শরীরে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা, একজন নারীকে নির্যাতন এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা, কোন নারীকে পুড়িয়ে মারা, বীভৎস কায়দায় মানুষকে হত্যা করা, এসব ঘটনায় সোচ্চার থেকে পার্টির ফোরামে কথা বলেছি। যাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। সরকারের যে সমস্ত ইন্সট্রুমেন্ট আছে, প্রশাসন যন্ত্র আছে তারা যেন সেখানে প্রপারলি কাজ করে সেজন্য তাদের অ্যাড্রেস করেছি। ন্যায়বিচারে বাধাগ্রস্ত সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের ট্রানস্ফার করার জন্য আমরা কথা বলেছি।’
ব্রেকিংনিউজ : আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে কোনও অভিযোগ আসলে আইন সম্পাদক হিসেবে কোন ধরনের ভূমিকায় ছিলেন?
শ ম রেজাউল করিম : আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসলে, আমরা সেখানে সোচ্চার হতে বলেছি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যেকোনও ব্যক্তি দলের জন্য মুখ্য না, তার বিচার হতে হবে, আমরা সেটা করতে চেষ্টা করেছি। আমাদের টার্গেট হলো অপরাধীর অপরাধের বিচার করতে হবে; তার পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি বিচার্য না। এটি আমরা রক্ষা করেছি।’
ব্রেকিংনিউজ : আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে কোনও চাপ অনুভব করেন কিনা?
শ ম রেজাউল করিম : মন্ত্রী হিসেবে এবং পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ল' সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ দুটি বিষয় কখনও আমার আছে সাংঘর্ষিক মনে হয়নি। কারণ আমাদের যিনি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তিনি আজ পর্যন্ত কোনদিন আমাকে বলেননি, “অমুকের বিরুদ্ধে কিছু করো না, তমুককে ছেড়ে দাও বা এটাকে বিশেষভাবে দেখো”। তিনি বরাবরই বলেছেন, “তোমার মেধা-জ্ঞান তোমার শপথ ও সততা নিয়ে দায়িত্ব পালন করবা, ইট ইস ইউর অপশন”। ফলে ল-সেক্রেটারি ও মন্ত্রণালয় একসঙ্গে চালাতে গিয়ে কখনও চাপ মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে, এ দায়িত্ব থাকায় আমি অনেক তদবিরকে এভোয়েড করতে পেরেছি। আমি হচ্ছি ল-সেক্রেটারি পার্টির। আমি যদি ই-লিগ্যাল কাজটা করি তাহলে বলবে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে গেলো। রক্ষক আমি, ভক্ষক হতে চাই না।’
ব্রেকিংনিউজ : সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শ ম রেজাউল করিম : আপনাকে ও ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন