বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের লোকসভায় যে বক্তব্য দিয়েছে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলের পক্ষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ আহ্বান জানান।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অমিত শাহের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।
রিজভী বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনে বিএনপিকে অভিযুক্ত করে ন্যাক্কারজনক বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না থামার কারণেই নাকি ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনি বিল এনেছেন। এক্ষেত্রে তিনি সরাসরি বিএনপির নাম উল্লেখ করে অভিযোগ তুলেছেন যে, এ আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন অনেক বেশি হয়েছে। অমিত শাহ সত্যভ্রষ্ট। অমিত শাহের দায়িত্বজ্ঞানহীন এমন জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং ভিত্তিহীন এ অভিযোগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলছি, বিএনপি সরকারের আমলে দেশে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বরং অমিত শাহদের আশির্বাদপুষ্ট আওয়ামী লীগের আমলে তাদের ওপর নির্যাতন হয়েছে।
বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। প্রতিটি নাগরিকের ধর্মপালনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিভাজনে বিশ্বাসী নই। সরকারের সময় আমরা কখনো কোনো নাগরিককে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নির্যাতন, অধিকার থেকে বঞ্চিত কিংবা ধর্মাচরণে বাধা দেইনি। আইনের শাসনকে কঠোরভাবে বলবৎ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রিজভী বলেন, বিএনপি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে শান্তি-শৃঙখলা কঠোরভাবে বলবৎ করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের আগে নির্বাচনী সহিংসতায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক প্রতিশোধের বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকেও তদন্ত এবং আইনের আওতায় আনা হয়। কোথাও অমুসলিম নাগরিকদের ওপর কোনো রকম অত্যাচার চালানোর সুযোগ কাউকে দেয়া হয়নি। বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারী আওয়ামী শাসনামলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর আঘাত এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামী লীগ সমর্থক ড. আবুল বারাকাতের গবেষণা ‘বাংলাদেশে কৃষি ভূমি জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি-২০১৬’ ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যত অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে এবং তাদের যত জায়গা-জমি-সহায় সম্পদ দখল হয়েছে তা আওয়ামী লীগের দ্বারাই হয়েছে। সুতরাং বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে ভারতীয় বিজেপির অমিত শাহের এ বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং সৎ প্রতিবেশীসূলভ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অশুভ ইঙ্গিত। তার এ বক্তব্য বাংলাদেশি জনগণকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা। একটি দলকে কব্জায় নিয়ে বাংলাদেশে তারা যে আধিপত্য বজায় রেখেছেন, অমিত শাহের এ বক্তব্য তারই সুষ্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।
রিজভী আরও বলেন, ইতিমধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকদের গণহারে পুশইন শুরু হয়েছে। সীমান্তে বিজিবি কয়েক দফা তাদের গ্রেফতার করে জেলেও পাঠিয়েছে। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ অবধি এটা জানেনই না বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন! অন্যদিকে ভারতের নানা প্রান্ত থেকে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে অসংখ্য মুসলিম নারী-পুরুষদের আটক করে দলে দলে কলকাতায় নিয়ে এসে গোপনে ও জোর করে সীমান্ত পার করে দেয়া হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে। যা খোদ ভারতের সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন