বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আজ বৃহস্পতিবার জামিনের ওপর শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য রয়েছে। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন আজ আপিল বিভাগে দাখিল করা হবে। মেডিক্যাল বোর্ড তাদের প্রতিবেদনে সত্য তথ্যগুলো তুলে ধরবে বলে বিএনপির প্রত্যাশা। তাই সারা দেশের দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নজর এখন আদালতের দিকে। তারা সুসংবাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির নীতি-নির্ধারকসহ আইনজীবী নেতাদের প্রত্যাশা, শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন তাদের নেত্রী। জামিন না হলে কেন্দ্র থেকে কর্মসূচিও প্রত্যাশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে আইনি প্রক্রিয়া দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। রায় দেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। অবশ্য দলটির একাধিক নেতার মতে, আদালত আজ জামিনের ওপর শুনানি শেষে অন্য কোনো দিন আদেশের দিন ফের ধার্য করলে ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি। তবে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিনে আদালতের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। জামিনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করবেন নেতাকর্মীরা। প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর শুনানিতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত ও মানবিক কারণে তার আইনজীবীরা জামিন প্রার্থনা করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট চেয়েছেন আজ বৃহস্পতিবার। আমরাসহ সারা দেশের মানুষ এই প্রত্যাশা করে যে, যেসব চিকিৎসক মেডিক্যাল বোর্ডের দায়িত্বে আছেন তারা সত্য কথাটা বলবেন। আমরা অন্য কোনো কিছু চাই না। অমানবিকতা-প্রতিহিংসার একটা সীমা থাকে। সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
জানা গেছে, এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিষয়টিই বিএনপির এক নম্বর ইস্যু। তাই দলীয় প্রধানের জামিনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে তার মুক্তিতে আন্দোলনের পথেই হাঁটবে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে দেশব্যাপী বিক্ষোভসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে আন্দোলনকে বেগবান করা হবে। ডিসেম্বরজুড়ে আন্দোলনের কর্মসূচি থাকবে। সেই সাথে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঢাকায় মহাসমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। সেখান থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে, এমনকি ওই মহাসমাবেশ থেকে এক দফার কর্মসূচির ডাকও দেয়া হতে পারে। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দিতে দীর্ঘ দিন ধরে দলের হাইকমান্ডের ওপর তৃণমূলের চাপ রয়েছে। মাঠপর্যায়ের নেতারা হরতাল-অবরোধের পরামর্শও দিয়েছেন দলের হাইকমান্ডকে।
আজ আদালতের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক জনসমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির নীতি-নির্ধারকদের। দল সমর্থিত সব আইনজীবীকে এ দিন হাইকোর্টে যেতে বলা হয়েছে। দলের সমর্থক যেসব আইনজীবী নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন না, তারাও আইনজীবীর পোশাক পরে আদালতে যাবেন। আদালতের বাইরেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের আজ আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বেগম খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন। রায় দেখে আমরা আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। তা না হলে এক দফার আন্দোলনই হবে আমাদের পথ।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুরো জাতি দেশনেত্রীর জামিনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইনি প্রক্রিয়া দেখে তার পর আমাদের কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দু’টি জায়গা আছে। একটা সংসদ আর একটা রাজপথ। যখন দেখব গণতন্ত্রের স্পেস সঙ্কুচিত, তখন রাজপথে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। আর গণতন্ত্রের মুক্তির একটি অন্যতম শর্ত হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে ৬৬৫ দিন হলো অবৈধ ক্ষমতার জোরে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আইন-আদালত, ন্যায়বিচার, সংবিধান, বয়স, অসুস্থতাসহ সব বিবেচনায় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া আইনগত অধিকার।
দেশ-বিদেশের আইনজ্ঞরা বলছেন, এ মামলায় জামিন না পাওয়া বিস্ময়কর। তিনি নিশ্চিতভাবেই জামিনের হকদার। গোটা বাংলাদেশের মানুষ অব্যাহতভাবে দাবি জানাচ্ছে তার জামিনের। অথচ স্বাভাবিক এ জামিন নিয়ে কত রকমের টালবাহানা করা হচ্ছে। সরকারদলীয় লোকেরা প্রকাশ্যে হুমকি ও ঘোষণা দিয়ে জামিনে বাধা দিচ্ছে। দেশনেত্রীকে জেলে রেখে হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গত ১ এপ্রিল থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। দলীয় চেয়ারপারসন কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই তার মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সাদামাটা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এরই মধ্যে কারাবন্দীর ৬৬৬ দিন পেরিয়ে গেছে খালেদা জিয়ার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন