কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সাক্ষাৎ কেবল শাড়ি আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল- প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি নিয়ে একটা সুরাহা করে আসবেন।’
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী এসব কথা বলেন।
শুক্রবার ইডেন গার্ডেনে গোলাপি বলের বাংলাদেশ-ভারতের টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জীর মধ্যে একান্তে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানির ন্যায্যতা দূরে থাক, কোনো হিস্যাই পাওয়া যায়নি। ফেনী নদীর পানি বিনিময় ছাড়াই উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঊষর মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। সেচ মৌসুম চলছে অথচ এখনই নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ অন্যান্য এলাকায় সেচের পানি সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে কোনো আলোচনাই করেননি।’
রিজভী আরও বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন সীমান্ত হত্যা চলছে, এ নিয়েও শেখ হাসিনা মুখবন্ধ রেখেছেন। দেশ মরুভূমি হয়ে যাক, সীমান্তে প্রতিদিন বাংলাদেশি মানুষ মরুক তাতে শেখ হাসিনার কিছু আসে যায় না। তার ক্ষমতার সোনার হরিণটি নিশ্চিত হলেই সন্তুষ্ট। আওয়ামী লীগের ভাবাদর্শ হচ্ছে নিজ দেশে অত্যাচারী আর অন্য দেশের প্রতি নতজানু থাকা।’
সরকার দেশের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, কিন্তু বিএনপির মুখ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই- ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এই বক্তব্যের মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের সাহেব নিজের অজান্তেই স্বীকার করে নিলেন- আইন আদালত, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখেছেন। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। গুম-খুন-ক্রসফায়ারের মুখেও বিএনপি যেটুকু বলছে সেটিকেও তিনি স্তব্ধ করে দিতে ইঙ্গিত হচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য। তার বক্তব্য একচেটিয়া স্বৈরশাসকদের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।’
রিজভী আরও বলেন, ‘গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন- মানুষ বিমানে চড়তে পারে না, আর আমি বিদেশ থেকে বিমানে পেঁয়াজ নিয়ে আসছি। অবৈধ সরকারের গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের মুখে এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যই শোভা পায়। জনশ্রুতি আছে- ব্যবসায়ী মন্ত্রীদের নেতৃত্বেই নাকি বাজার সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা লোপাট চলছে। পেঁয়াজের যখন ভয়াবহ সংকট চলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার যখন নিয়ন্ত্রণহীন তখন তার দেখা মেলে না। গতকাল হঠাৎ হাজির হয়ে তিনি উদ্ভট মন্তব্য করলেন। তার এ ধরনের বক্তব্য জনগণের সঙ্গে ইয়ার্কি ছাড়া কিছু নয়। বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বী করেছে বলে জনগণ মনে করে। আর এ কারণেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের।’
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা দিনের পর দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে উল্লেখ রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রীর জামিন কিংবা সুচিকিৎসার ব্যাপারে প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকারের নিষ্ঠুরতা যেন থামছেই না। দেশনেত্রীর বিপুল জনপ্রিয়তা শেখ হাসিনা সহ্য করতে পারেন না বলেই মিথ্যা অভিযোগে সাজানো মামলায় তাকে কারাগারে বন্দি রেখেছেন। কিন্তু সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন জনগণের সম্মিলিত শক্তি কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবেই।’
রবিবার রাজধানীতে সমাবেশ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করেছে বিএনপি।
রিজভী বলেন, আজ (শনিবার) বেলা ২টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেটা রবিবার বেলা ২টায় কার্যালয়ের সামনে অথবা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য আমরা পুলিশকে চিঠি দিয়েছি।
আজকের কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করা হলো কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, আজ বিশেষ কর্মসূচির কারণে প্রশাসন থেকে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন