ছাত্রলীগের নানা অনিয়ম-অপকর্ম ও নৃশংসতার কথা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘গত ১০ বছর ধরে সারা দেশে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি চলছে। উন্নয়নের ফাঁকা বুলি ছুড়ে লুটপাট করা হচ্ছে সর্বোচ্চ। সরকারের ছত্রছায়ায় ঢাকা শহর এখন ক্যাসিনো নগরীতে পরিণত হয়েছে। আজকে সরকার সেগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যা করার পর সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশ দিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ নিজেদের করায়ত্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে দুই ঘণ্টা পরে সেই ফুটেজ দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। সেই ফুটেজে অপরাধীরা চিহ্নিত হওয়ায় সরকার তাদেরকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলা এরা কারা? সবাই জানে এরা ছাত্রলীগ, এরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘ভারত সফরে গিয়ে ৪টি জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করে এসেছেন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘কোনটা স্বার্থবিরোধী নয়, ফেনী নদীর পানি ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অথছ এই ফেনী কোনও অভিন্ন নদী নয়, এটা বাংলাদেশের নদী। ফেনী নদীর পানি ভারতকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পানি ভারত ব্যবহার করার ফলে আমাদের কৃষিতে ক্ষতি হবে, আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাত্রার অবনতি ঘটবে। ওইসব এলাকায় আমাদের সব ধরনের চাষাবাদের ক্ষতি হবে। এটি যদি বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার বলে থাকে তাহলে অন্যায় তিনি কোথায় করেছেন? আমাদের উপকূলে নাকি রাডার বসানো হবে। কার স্বার্থে এই রাডার বসানো হবে? রাডার বসালে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’
শহীদ আবরারের কী দোষ ছিল- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য ‘দেশের শিক্ষিত এবং সচেতন একজন নাগরিক হিসেবে, একজন মেধাবী বুয়েটের ছাত্র হিসেবে আবরার যদি তার মতামত দিয়ে থাকেন সেটির জন্য কি তাকে পিটিয়ে হত্যা করা যায়? তাহলে এদেশে কোথায় স্বাধীনতা, কোথায় মানবিক মূল্যবোধ?’
তিনি বলেন, ‘সবকিছুকে আজকে এই স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার লুটিয়ে দিয়েছে, ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। আজকে এই গণতন্ত্রহীন দেশে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ কতটা নৃশংস কতটা অমানুষ হলে এই ধরনের বর্বর ঘটনা ঘটায়।’
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘যেহেতু বর্তমান সরকার ভোট ডাকাতির সরকার, গণতান্ত্রিক সরকার নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়- তাই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ আজকে ‘পেটুয়া লীগ’ এবং ‘সন্ত্রাসী লীগে’ পরিণত হয়েছে। দেশে আজ গণতন্ত্রের লেশমাত্র নাই, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার দেশকে পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগ আজ কী পরিমাণ নৃশংস কী পরিমাণ সন্ত্রাসী কী পরিমাণ বর্বর হয়ে উঠেছে তা মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডই প্রমাণ করে। এটা ভাবতেও ঘৃণা লাগে ছাত্রলীগ আজ কী পরিমাণ ভয়াবহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ জেহাদ স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম রক্ত দিয়ে তার পতনের বীজ রোপন করে গিয়েছিল। ঠিক একইভাবে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে শহীদ আবরার জীবন দিয়ে তাদেরও পতনের অঙ্কুর পুতে গেছেন, শুভ সূচনা করে গেছেন। তার সমাপ্তি ঘটানোর দায়িত্ব বর্তমান এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের। মনে রাখতে হবে এ দেশের যত আন্দোলন হয়েছে সেইসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররা। জনগণ জেগে উঠেছে, ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেই।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন মনি, খন্দকার লুৎফর রহমান, এ বি এম মোশারফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল ও আমিরুল ইসলাম খান আলীম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন