রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ফেনীর ফুলগাজী বাজার শাখার ক্যাশ অফিসার আব্দুল গফুর। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে কর্মরত অবস্থায় কেউ রাজনীতি করতে না পারলেও তিনি জনতা ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি দীর্ঘ তিন দশক ধরে বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। এতে তার চাকরির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার দীর্ঘদিন ধরে একই পদে আসীন থাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে আবার হতাশ হয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার কথা ভাবছেন।
সরকারি চাকরি অবস্থায় রাজনৈতিক দলের পদে থাকার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দলীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি হজ পালনের জন্য এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
জানা যায়, গত ১২ জুলাই বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও তিনি আবারও সভাপতি পদে প্রার্থী হন। গত ২৯ জুলাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আব্দুল গফুরের প্রার্থীতা বাতিল করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর ডাকযোগে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, একই সঙ্গে সরকারি চাকরি এবং দলের পদে থাকাকে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধি ও পরিচালনা বিধি বিধান লঙ্ঘন এবং আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। স্মারকলিপির অনুলিপি পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ডাকযোগে পাঠানো হয়।
এছাড়া একই দিন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করার কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনতা ব্যাংক হেড অফিস, ফেনী আঞ্চলিক অফিস এবং ফুলগাজী অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট ডাকযোগে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এছাড়াও দীর্ঘদিন একজন ব্যক্তি একটি পদে থাকায় দলে নতুন নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ হচ্ছে না উল্লেখ করে নাম প্রকাশ না করা শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি সবারই নানা প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন একই ব্যক্তি একটি পদে থাকলে রুট লেভেল অর্থাৎ ওয়ার্ড পর্যায় থেকে নেতৃত্ব উঠে আসে না। এছাড়া অনেকে দীর্ঘদিন ধরে পদ বঞ্চিত থাকায় হতাশ হয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়। তারা বলেন, দলীয় প্রভাবে আব্দুল গফুর যেকোনো ইস্যুতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করেন। এতে তিনি প্রকারান্তে বিভিন্ন সময় দলের ইমেজ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মজুমদার বলেন, দলের প্রয়োজনে আব্দুল গফুর দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছেন। অনেক আগে থেকেই তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এই পদে রয়েছেন। সরকারি চাকরি করে দলের পদে থাকা কী আপনাদের গঠনতন্ত্রে রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া আমি চাইলেও কিছু করতে পারি না এখানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তার সরকারি চাকরির বিষয়টি জানেন।
সম্মেলনের দায়িত্বে থাকা ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন বলেন, আমরা এখনো কমিটি ঘোষণা করিনি। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চাঙা করার জন্য আমরা সম্মেলন করেছি। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সিভি সংগ্রহ করেছি। প্রার্থীদের মধ্যে কেউ সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী রয়েছে কিনা সেটি যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। আমরা যাচাই বাছাই শেষে জেলা নেতৃবৃন্দ সঙ্গে বৈঠক করে যোগ্য প্রার্থীদের দিয়ে কমিটি ঘোষণা করবো।
দীর্ঘ তিন দশক ধরে একজন ব্যক্তি ইউনিয়ন সভাপতি থাকলে রুট লেভেল থেকে নেতৃত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সত্যি কি তিনি ৩০ বছর যাবৎ সভাপতি পদে রয়েছেন কিনা সেটি আগে জানতে হবে।
সরকারি চাকরি অবস্থায় কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পদে থাকার বিষয় জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় ফেনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরান হোসোন মজুমদার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আপনি হেড অফিসে যোগাযোগ করুন।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের টেলিফোন লাইলে বারবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন