দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভেঙে ‘জামায়াত-শিবির স্টাইল’-এ কর্মসূচি দেয়া, পোস্টার ছাপানো এবং বিতর্কিত অতিথি করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ২২ আগস্ট রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে এই কর্মসূচি হওয়ার কথা।
সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ এ ধরনের কর্মসূচির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বর্তমান নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ফলে তোপের মুখে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, এই পোস্টার ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
গত রোববার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়াল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের আয়োজনে পবিত্র কোরআন খতম, হামদ-নাত পরিবেশনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের একটি পোস্টার।
ফেসবুকেও অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করে ও অভিবাদন জানিয়ে ওই পোস্টারের ছবি দিয়ে অনেক নেতাকে পোস্ট করতে দেখা যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ট্যাগ দেয়া (যুক্ত করে) হয়। এরপরই ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পর্যায় থেকে শুরু হয় বিতর্ক।
পোস্টারটিতে রেওয়াজ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিল না। পোস্টারের ডিজাইন ও রংয়েও ছিল জামায়াত-শিবির, ইসলামী দলগুলোর পোস্টারের অনুকরণ। সেখানে হামদ-নাত পরিবেশনের শিল্পীর তালিকায় ছিল মুহিব খানের নাম। যার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী গান পরিবেশন ও পারিবারিকভাবে বিএনপি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গানের বিভিন্ন লাইন ফেসবুকে শেয়ার করেন তারা। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সংগঠনে জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশ ঘটনানোর অভিযোগও আনেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগ এই পোস্টার ও অনুষ্ঠানের দায় অস্বীকার করে।
ছাত্রলীগের দফতরবিষয়ক উপ-সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই অনুষ্ঠান ও পোস্টারের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ওই অনুষ্ঠান ও পোস্টারের ব্যাপারে জ্ঞাত নন। অতিথি তালিকা সমেত ওই পোস্টার প্রকাশনা ও প্রচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পোস্টার ও অনুষ্ঠানের দায় অস্বীকার করলেও সংগঠনটির অন্তত ১২ জন নেতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, এগুলো সংগঠনটির পক্ষ থেকেই করা হয়েছে।
তাদের দাবি, ক্যাম্পাসের মধ্যে এসে ছাত্রলীগের বাইরে অন্য কেউ এতগুলো পোস্টার লাগাবে- তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বিতর্কিত এই পোস্টারের বিষয়টি ফেসবুকে আলোচনায় এনেছেন এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন এমন একজন ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রলীগের এবারের কমিটিতে ব্যাপক হারে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট ঢুকানোর ফলই হচ্ছে এই পোস্টার। এই পোস্টারের মাধ্যমে সংগঠনের অতীত ঐতিহ্য ভেঙে এক ধরনের ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
এদিকে অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসানের সঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শেখ আবদুল্লাহর কথোপকথনের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিয়েই অতিথি তালিকা ও পোস্টার বানানো হয়েছে বলে দাবি করেন মাহমুদ। যদিও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে পোস্টারটি ছাপিয়েছে ফকিরাপুলের ‘মহরত ডিজাইন ও প্রিন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা জানিয়েছে, মোট দুই হাজার কপি পোস্টার ছাপানো হয়েছে। পোস্টারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আটজনের নাম ছিল। যাদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ফোন করে তাকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এসব বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কনসার্নের বাইরে এটি করা হয়েছে। মাহমুদ মাঝে মাঝে পার্টি অফিসে আসতো। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু পোস্টার ছাপাতে বলা হয়নি।
সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, কওমি ধারার ছাত্রদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করা হয়, সেরকম একটি সাজেশন্স চাওয়া হয়েছিল তাদের কাছ থেকে।কিন্তু একটি পোস্টার করে প্রোগ্রাম সেট করে ফেলা কাম্য নয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন