আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে আজ মঙ্গলবার শেষ দিনে নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াদের মধ্যে বিবাহিতরাও রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলরদের ভোটে দুই শীর্ষ পদে নেতা নির্বাচিত হবে কি না, তা নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্যেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিএনপি ও ছাত্রদলের সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, দলের হাইকমান্ড অর্থাৎ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান ঘোষিত পুনঃতফসিল অনুযায়ী কাউন্সিলরদের ভোটে ছাত্রদলের শীর্ষ দুই পদে নেতা নির্বাচন করতে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ দুটি সিন্ডিকেট। ওই দুই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ তারা সমঝোতার মাধ্যমে বাগিয়ে নেবেন-এই পরিকল্পনা করছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতি প্রার্থী মামুন খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করার যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন, তা হচ্ছে বড় প্রমাণ। আমরা মনে করি, যে যা ভাবুক, লাভ নেই। ভোটেই হবে ছাত্রদলের কমিটি। ’
জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ডালিয়া রহমানআমাদের সময়কে বলেন, ‘ভোটে নেতা নির্বাচিত হবে-এই সুযোগ পেয়েই প্রার্থী হয়েছি। বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে আমার কী অবদান-তা নেতাকর্মীরা জানেন। অতএব, কাউন্সিলররা ভোটের ক্ষেত্রে আমাকে বিবেচনা করবেন। ’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া একাধিক নেতা মনে বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিবাহিতরাও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন এবং জমা দিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে স্পষ্টভাবে বলা আছে, অবিবাহিত হতে হবে, এসএসসি-২০০০ সালের মধ্যে হতে হবে, বর্তমানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবশ্যই ভর্তি থাকতে হবে। কিন্তু এসব শর্ত না মেনে অনেকেই ফরম ক্রয় ও জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিয়ে করেছেন ও সন্তানও আছে। কিন্তু এখন আবার অস্বীকারও করছেন। আবার কেউ বলছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু তালাক হয়ে গেছে।
বিলুপ্ত কমিটির সাবেক এক নেতা বলেন, ‘ছাত্রদলের কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজেরাও জানেন কে বিবাহিত, কে অবাহিত। জানার পরও ওই সব বিবাহিতদের কাছে ফরম বিক্রি করেছেন ও জমাও নিয়েছেন। এতে করে নতুন করে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যদি বিবাহিতরা বাদ পড়েন, তাহলে তার অনুসারীরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আবার যদি বিবাহিত হওয়ার পরও প্রমাণের অভাবে প্রার্থিতা বাতিল না হয়, তাহলে অন্যরা ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া দেখাবে। ’
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানতে চাইলে ফজলুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতাদের মধ্যে যদি কেউ বিবাহিত হয়েও থাকে, আর তারা স্বীকার না করেন, আমরা খুঁজে খুঁজে তাদের তথ্য বের করব। বিবাহিত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হবে।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবু তাহের আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিয়ে করার কারণে প্রার্থিতা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। যদিও আমি মনে করি দেখানো ঠিক হবে না। আবার কেউ বিয়ে করেছেন কিন্তু তথ্য প্রমাণের অভাবে প্রার্থিতা বাতিল হলো না-এক্ষেত্রেও অন্যরা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’
বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, বিবাহিতদের প্রার্থিতা বাতিল করা অথবা না করা নিয়ে আবারও একটা সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এর আগে বয়সসীমা তুলে দেওয়ার দাবিতে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নেমেছিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হলেও ১২ নেতার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার না করায় ওই সব ছাত্রনেতাদের মধ্যে অস্থিরতাও রয়েছে।
এই অবস্থায় বিশেষ সিন্ডিকেটের ইঙ্গিতে বিবাহিত ইস্যুতে সঙ্কট সৃষ্টি করে আবার ছাত্রদলে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিল আবারও বন্ধ হতে পারে। এর দায় চাপানো হতে পারে বহিষ্কৃত নেতাদের ঘাড়ে। এই অবস্থায় ছাত্রদলের কাউন্সিল না করে পকেট কমিটি গঠন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষ দুই সিন্ডিকেটের মধ্যে অমিল থাকলেও কমিটি গঠনের সময় তারা একটেবিলে বসতে পারেন বলেও জানান বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি আমানুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘যদি সুক্ষ্মভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়, তাহলে কোনো সঙ্কট থাকার কথা না। কিন্তু ব্যত্যয় ঘটলে সঙ্কট সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।’
৭৫ জনের মনোনয়নপত্র জমা
ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বে স্থান পেতে সভাপতি পদে ২৭ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে দুই পদে মোট ৭৬টি ফরম জমা পড়ে। সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন নারী প্রার্থী ফরম কিনেছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের নাদিয়া পাঠান পাপন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডালিয়া রহমান সংগৃহীত মনোনয়নপত্র জমা দেন। বিক্রি হয়েছিল ১১০টি। মঙ্গলবার থেকে আগামী পাঁচ দিন জমাকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবেন বাছাই কমিটি।
জমা হওয়া তালিকায় সভাপতি পদে রয়েছেন সর্দার আমিনুল ইসলাম সাগর, মামুন খান, আসাদুল আলম টিটু, আশরাফুল আলম ফকির লিংকন, আজিম উদ্দিন মেরাজ, ইলিয়াস, হাফিজুর রহমান, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাজিদ হাসান বাবু, আল মেহেদি তালুকদার, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, তানভীর রেজা রুবেল, এরশাদ খান, এবিএম মাহমুদ আলম, এম আরজ আলী শান্ত, মো. সুরুজ মন্ডল, মো. আবদুল মাজেদ, মাইনুল ইসলাম, মো. ফজলুর রহমান, মুহাম্মদ ফজলুল হক নিরব, আরাফাত বিল্লাহ খান, এসএম আল আমিন, মো. জুয়েল মৃধা, আবদুল হান্নান, মো. শামীম হোসেন, এসএএম আমিরুল ইসলাম, সুলায়মান হোসাইন ও আল আমিন কাউছার।
সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন সাইফ মাহমুদ জুয়েল হাওলাদার, শাহনেওয়াজ, রিয়াজ মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, ওমর ফারুক শাকিল চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন রুবেল, আবদুল মান্নান, নাদিয়া পাঠান পাপন, এবিএম বাকির জুয়েল, মিজানুর রহমান শরীফ, মো. ওমর ফারুক, মো. হাসান (তানজিল হাসান), মো. আলাউদ্দিন খান, রাশেদ ইকবাল খান, আমিনুর রহমান, ইকবাল হাসান শ্যামল, ইমদাদুল হক মজুমদার, মো. নাইম হাসান, কেএম সাখাওয়াত হোসেন, এএএম ইয়াহইয়া, ডালিয়া রহমান, সোহেল রানা, মোহাম্মদ কারীমুল হাই নাঈম, মহিনউদ্দীন রাজু, আরিফুল হক, মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. আসাদুজ্জামান রিংকু।,
এ ছাড়া আরও রয়েছেন মো. আবুল বাশার, মো. মিজানুর রহমান সজীব, মো. জুলহাস উদ্দিন, মো. মিজানুর রহমান, মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির, সাদিকুর রহমান সাদিক, আবদুল মোমেন মিয়া, কাজী মাজাহারুল ইসলাম, মো. আজিজুল হক সোহেল, শেখ মো. মশিউর, মো. জামিল হোসেন, শেখ আবু তাহের, মো. তবিবুর রহমান সাগর, মাজেদুল ইসলাম, মাহমুদুল আলম শাহিন, মো. জোবায়ের আল মাহমুদ রিজভী, নাজমুল হক হাবীব, জহিরুল ইসলাম (দিপু পাটোয়ারি), আনিসুর রহমান সুমন, এমএম বাবুল আক্তার শান্ত ও মুন্সি আনিসুর রহমান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন