জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সমাহিত করার জন্য রংপুরে পল্লী নিবাসের লিচু বাগানে জায়গা শনাক্ত করে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
রাজশাহী বিভাগের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পল্লীনিবাসে ওসিয়ত করা জায়গা পরিদর্শন করেন। পরে এরশাদের নিজ হাতে লাগানো লিচু বাগানে কবরের মাপ শেষে কোদাল হাতে কবর খোঁড়া কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে হলেও এরশাদের কবর রংপুরে দেয়া হবে। এই লিচুতলাতেই আমাদের নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে দাফন করতে হবে। এটাই রংপুরবাসীর দাবি।’
এই জাপা নেতা বলেন, ‘যে কোনও মূল্যে রংপুরে এরশাদ স্যারের দাফন সম্পন্ন করা হবে। কেউ যদি রংপুরের মানুষের আবেগ ভালোবাসা নিয়ে রাজনীতি করেন, অপচেষ্টা চালায়, এর পরিমাণ ভালো হবে না। আমরা শরীরের এক বিন্দু রক্ত থাকতে রংপুর থেকে এরশাদ স্যারের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যেতে দেব না। এটা আমাদের একদফা এক দাবি।’
তিনি বলেন, ‘এর পরেও যদি ঢাকার সেনানিবাসে পল্লীবন্ধুর লাশ দাফন করার চেষ্টা করা হয়, যদি রংপুর থেকে এরশাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় তবে রংপুর তথা গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
এর আগে রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় জাতীয় পার্টির যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘এরশাদের মৃত্যুর পরেও তাঁকে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে ও জাতীয় পার্টিকে ধংসের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষ এই ষড়যন্ত্রকে কোনভাবেই মেনে নেবে না।’
এসময় ঢাকার সামরিক কবরস্থানে এরশাদকে সমাহিত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে তা প্রত্যাখ্যান করেন উপস্থিত রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এরশাদ। গতকালই বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সম্পন্ন হয়েছে। এদিন বাদ আসর বায়তুল মোকাররমে তাঁর তৃতীয় জানাজা শেষে আবারও মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল নেয়া হবে রংপুরে।
এর আগে গত ৩ জুলাই জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের এক যৌথসভায় এরশাদের কবরস্থান নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় আসলে দলের নেতাই এরশাদের কবরের স্থান দান করতে প্রস্তাব রাখেন। বিষয়টি এক পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়।
এদিকে এরশাদের সমাধি কোথায় হবে এ নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্য। জাপার শীর্ষ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় বনানী সামরিক কবরস্থানে এরশাদকে সমাধিস্থ করা হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন