জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায়। মানে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। সর্বময় ক্ষমতায় অধিকারী। সেই এরশাদকেই প্রশ্ন করে ভড়কে দিয়েছিলেন সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন। সেই সময় ওই ঘটনাটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল।
এরশাদ সেই প্রশ্নে যতটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন, তার নয় বছরের শাসনামলে তেমনটি আর হয়নি। সে কারণে অবশ্য ওই সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। শুধু ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছিল।
কী প্রশ্ন ছিল?
প্রশ্নটি ছিল দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় এরশাদের কবিতা ছাপানো নিয়ে।
১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাস। এরশাদ যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। সংসদ ভবনে তখন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তর (সিএমএলএ)। সেখানে রীতি অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনেই বাসসের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর হোসেন এরশাদকে বলেন, “আমি কি আপনাকে একটি অরাজনৈতিক প্রশ্ন করতে পারি?”
জেনারেল এরশাদ বেশ খুশি হয়ে গেলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর হোসেন যে প্রশ্নটি তাকে ছুঁড়ে দিলেন, সেটির জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। একজন প্রবল ক্ষমতাধর সামরিক শাসক আর এক সাংবাদিকের মধ্যে এই প্রশ্নোত্তর পর্ব বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় প্রবাদতুল্য হয়ে আছে।
ইংরেজিতে করা ওই প্রশ্নের বাংলাটা এরকম: “আপনি ক্ষমতায় আসার আগে কেউ জানতো না আপনি একজন কবি। এখন সব পত্রিকার প্রথম পাতায় আপনার কবিতা ছাপা হয়। পত্রিকার প্রথম পাতা তো খবরের জন্য, কবিতার জন্য নয়। বাংলাদেশের প্রধানতম কবি শামসুর রাহমানেরও তো এই ভাগ্য হয়নি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার কবিতা প্রথম পাতায় ছাপানোর জন্য কী কোন নির্দেশ জারি করা হয়েছে?”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাই হতচকিত। জেনারেল এরশাদের পাশে বসা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আর এস দোহা বললেন, “শামসুর রাহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নন।
জেনারেল এরশাদ অবশ্য তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “আমি দেশের জন্য এত করি, এটুকু কি আপনি দেবেন না আমাকে?”
সাংবাদিক জাহাঙ্গীর পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, “আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি। আমার প্রশ্নটি হচ্ছে...
এবার জেনারেল এরশাদ বলেন, “আপনি যদি চান, আর ছাপা হবে না।”
এরপর পত্রিকার প্রথম পাতায় জেনারেল এরশাদের কবিতা ছাপা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার কবিতা প্রথম পাতা থেকে চলে গিয়েছিল ভেতরের পাতায়। তবে এর পরিণাম ভোগ করতে হয়েছিল জাহাঙ্গীর হোসেনকে। তাকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছিল। দুবছর পর তিনি পদত্যাগ করে সেখান থেকে চলে আসেন। (বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অবলম্বনে)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন