ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেলের একজন নারী চিকিৎসকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে একজন জনপ্রিয় তারকার। প্রায়ই দুজনের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ হতো। হঠাৎ করেই ওই টিভি তারকা কয়েকটি ছবি পাঠান নারী চিকিৎসকের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে। তিনি চমকে যান। তার পুরো শরীর কাঁপতে থাকে। এটা কিভাবে সম্ভব। ছবিগুলো তার নিজের। একান্তই ব্যক্তিগত।
ছবিগুলো ওই তারকাকে দেননি তিনি। ওই তারকা ছবিগুলো পাওয়ার কথা না। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। নিজের একান্ত সময়ে ধারণ করা ওই ছবিগুলো ফেসবুকে সংরক্ষণ করেছিলেন। অন্যকেউ যাতে তা দেখতে না পায় এজন্য ‘অনলি মি’ অপশন দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই ছবিগুলোই পেয়েছেন ওই তারকা। ছবিগুলো পাঠিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন তিনি। নতুবা তা ভাইরাল করা হবে। পৌঁছে যাবে লাখ লাখ মানুষের কাছে। এভাবেই হুমকি দেন তিনি। ঘটনাটি ঘটে গত ৯ই জুন।
নারী চিকিৎসক একপর্যায়ে বুঝতে পারেন ছবিগুলো অন্যের কাছে চলে যাওয়ার বিষয়টি। গত মে মাসে তার ফেসবুক আইডিটি হ্যাক হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সেটি উদ্ধারও করেন। তরুণীর ধারণা ওই সময়ে হ্যাকার তার আইডিতে ঢুকে তার গোপন এ্যালবামের ছবিগুলো দেখতে পায়। দ্রুত তা ডাউনলোড করে নিজের সংরক্ষণে রাখে। এই ছবিগুলো স্বল্পবসনা অবস্থায় ধারণকৃত। যা স্বামী বা প্রেমিক ছাড়া অন্য কাউকে দেখানোর মতো না। সেই ছবিগুলো ফেসবুকে সংরক্ষণ করতে গিয়ে হ্যাকারের শিকার হলেন তিনি। রাতে ঘটনাটি ঘটার পর আর ঘুম হয়নি ওই চিকিৎসকের। সকাল হতেই ছুটে যান সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগে। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ।
তদন্তে জানা যায়, টিভি নাটকের যে তারকার নামে ওই ফেসবুক আইডি সেটি মূলত তার না। ওই তারকার ছবি ও নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ এটি ব্যবহার করছে। এবার ভুয়া তারকাকে আটক করতে মাঠে নামে পুলিশ। কৌশল হিসেবে তার দাবিকৃত টাকা পাঠানো হয় বিকাশে। বিকাশ এজেন্টের তিনটি নম্বরে পাঠানো হয় প্রায় ২২ হাজার টাকা। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা যায় নম্বর তিনটি রংপুর সদরের। সহযোগিতা নেয়া হয় রংপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের। বিকাশের দোকান থেকে টাকা নিতে গেলে আটক করা হয় এক তরুণকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মারুফ নামের ওই তরুণ মূলত অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন। কুয়েত থেকে তাকে কাজ দেন যে ব্যক্তি তিনি তাকে কাজের পেমেন্ট হিসেবে বিকাশে এই টাকা পাঠিয়েছেন বলেই জানেন মারুফ। টাকা পাঠানোর আগে ম্যাসেজ দিয়ে তাকে জানানো হয়েছে, আপনার দেয়া বিকাশে পেমেন্ট পেয়ে যাবেন।
কুয়েতে থাকা ওই ব্যক্তি ফোন নম্বর পুলিশকে দিয়েছেন মারুফ। পুলিশ জানিয়েছে, আইডি হ্যাক, ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইলসহ এসব অপকর্মে মারুফের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ জানান, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে কুয়েত থেকেই ফেসবুক আইডিটি হ্যাক করা হয়। ওই আইডিতে থাকা চিকিৎসকের একান্তই ব্যক্তিগত ছবিগুলো নিয়ে তা ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে চাঁদাদাবি করে। মূল হ্যাকারকে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রংপুর থেকে আটক মারুফ সম্পর্কে সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, সে এসবের কিছুই জানেনা। হ্যাকারের সঙ্গে তার ফেসবুকেই কথা হতো। ওই তরুণীর আইডি হ্যাক হওয়া সম্পর্কে তিনি জানান, কুয়েত থেকে ফিশিং লিংক দিয়ে আইডি হ্যাক করা হয়। নিজের একান্তই ব্যক্তিগত ছবি ধারণ, সংরক্ষণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন