সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘খেলা অনেক খেলেছেন, আর নয়। আমি স্পষ্টভাবে একটি কথা বলতে চাই, এবার অনতিবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আসার সুযোগ দিন। নইলে গণরোষে ভেসে যাবে অনির্বাচিত অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের মসনদ।’
শনিবার (২৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল শাহবাগ থানার উদ্যোগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, জননেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় দোয়া ও ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘দেশে আইন বলতে কিছু নাই। এখন দুর্বৃত্তের আর লুটেরাদের শাসন চলছে। এখন অনিয়মের শাসন চলছে। এত খারাপ সময় বাংলাদেশ কেন এই ভূখণ্ডেই কোনোদিন কখনও আসেনি।’
ভারতের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে দুদু আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশের নির্বাচনের ফলাফল আমরা দেখলাম। মারামারি সেখানেও হয়েছে। তবে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। হাসিনা সরকারের মতো রাতের অন্ধকারে ভোট ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে- এরকম ঘটনা ভারতে আমরা দেখতে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দেশে যে নির্বাচন হয়েছে সেখানে একমাত্র ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোনও দেশ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিনন্দন জানায়নি। কেউ এধরনের নির্বাচন মেনে নেয়নি। কারণ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল ভোট দখলের নির্বাচন, রাতের অন্ধকারে জোর করে ক্ষমতায় আসার নির্বাচন।’
মোদীর ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে দুদু বলেন, ‘ভারতে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা এক ধর্মাবলম্বী হিন্দুত্ববাদী। সে দেশের জনগণ তাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে সমস্যাগুলো আছে তা খুব ভালোভাবে মীমাংসা হবে।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার হঠাৎ দেশত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটিমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে (এসকে সিনহা) দেশ থেকে পালিয়ে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে হয়েছে। সার্কভুক্ত অন্য কোনও দেশে কোনও প্রধান বিচারপতি এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েননি। এমনকি পাকিস্তান আমলেও যে পাকিস্তানকে আমরা জুলুমের রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলাম সে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতিকেও এভাবে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হয়নি। অতএব এখন বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে বলার অবশিষ্ট আর কিছু নেই।’
ধানের ন্যায্য মূল্য না থাকা নিয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দুদু বলেন, ‘যে কৃষক রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষেতে সোনার ধান ফলিয়ে প্রধানমন্ত্রী, সচিব, মন্ত্রীদের খাওয়ান সেই কৃষককে বাঁচার অধিকার দিন। তাদের ধানের ন্যায্যমূল্য দিন। কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল না দিয়ে সরকার ব্যাংক লুটকারী ও ঋণ খেলাপিদের অবাধে মুক্তি দিচ্ছেন। অথচ কৃষকের ব্যাপারে সরকার নির্লিপ্ত। আসলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি এই সরকারের মায়া, বিবেকবোধ বলতে কিছুই নাই।’
বিএনপি সরকারের সময়কাল উল্লেখ করে দুদু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে সারের দাম ছিল আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা বস্তা। সেই বস্তার দাম এখন ১২ থেকে ১৪ শত টাকা। বেগম জিয়ার সময়ে মোটা চালের দাম ছিল ১৬ থেকে ১৮ টাকা। আপনারা (বর্তমান সরকার) বলেছিলেন ১৮ টাকার চাল ১০ টাকা কেজিতে খাওয়াবেন। আপনারা কথা রাখেনি। উল্টো ১৮ টাকার চালের দাম ৬০ টাকা করেছেন। আপনারা আরও বলেছিলেন ঘরে ঘরে একজনকে চাকরি দিবেন। চাকরি তো দূরের কথা এখন এমন অবস্থা হয়েছে, চাকরি চলে যাচ্ছে। সেজন্য বলি, এই লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই দেশবিরোধী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই এই দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুররা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য ফিরে পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবির আন্দোলনের মহানায়ক ছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে কৃষক-শ্রমজীবীদের পথে তাদের অধিকার আদায়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সেজন্য আজ তাঁকে কারাগারে আটকে রেখেছে এই সরকার। আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাই- আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। যে কোনও মূল্যে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনি।’
শাহবাগ থানা কৃষক দলের সভাপতি এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা ও ইফতার মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন- কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, নাজিম উদ্দিন মাস্টার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নাসির হায়দার, মোজাম্মেল হক মিন্টু, আব্দুর রাজি, শফিকুল ইসলাম, কৃষকদল নেতা গোলাম সরোয়ার সরকার ও ইঞ্জিনিয়ার হৃদয় প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন