নতুন চমক আসছে জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। বগুড়া-৬ আসনে আসন্ন উপ-নির্বাচনে এ চমক দেখা যেতে পারে। এতে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামতে পারেন জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বড় ছেলে রাহগির আল মাহি।
গণমাধ্যমের বদৌলতে সাদ এরশাদ হিসেবে অধিক পরিচিত এরশাদ-রওশন দম্পতির এ সন্তানের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটবে এর মাধ্যমে। সূত্রের খবর, এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লেখাতে পারেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে মহাজোটের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে জাপার।
সরকারি দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতা আমাদের সময়কে নিশ্চিত করেছেন, বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে সাদ এরশাদকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তারা এ-ও জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এমন মন্তব্য তারা করতে পারছেন না আপাতত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আসন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেও নির্ধারিত সময়ে তিনি শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশন এ আসনে ২৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। একাদশ নির্বাচনে এ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। মহাজোট-সঙ্গী জাপার জন্য এ আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এবারও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের দুই নেতা। তারা বলেন, জাপাকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্তই হয়ে আছে।
সে ক্ষেত্রে ‘সাদ এরশাদ চমক’ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে বলেন, বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আগামী রবিবার দলের মনোনয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা হবে।
ওই সভায় বগুড়া-৬ এর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ ও আগামীকাল এ দুদিন বগুড়া-৬ আসনে দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি করবে আওয়ামী লীগ। দলটির এমপি পদপ্রত্যাশী নেতারা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন। আগামী শনিবার বিকাল ৫টার মধ্যে ফরম জমা দিতে হবে। পর দিন অনুষ্ঠেয় যৌথসভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, জাপার অধিকাংশ নেতাই অবশ্য এরশাদ-তনয়ের রাজনীতি-যাত্রার বিষয়টি স্রেফ গুঞ্জন বলে মনে করছেন।
তাদের ধারণা, যে কোনো কারণেই হোক, সাদের ওপর বিরক্ত এরশাদ। সম্প্রতি করা ট্রাস্টেও তাই তাকে রাখেননি পার্টির চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, তাকে দলের সাধারণ সদস্য পদও দেওয়া হয়নি এ পর্যন্ত। এসব যুক্তির তোড়ে তারা বলছেন, সাদকে জাপার মনোনয়ন দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। এ উপনির্বাচনে এবারও দলের মনোনয়ন চান একাদশ সংসদ নির্বাচনে মির্জা ফখরুলের কাছে পরাজিত জাপার হয়ে লড়াই করা নূরুল ইসলাম ওমর।
পাশাপাশি সদ্য জাপায় যোগ দেওয়া আশরাফুল ইসলাম যিনি মিডিয়ার বদৌলতে মূল নামের পরিবর্তে ‘হিরো আলম’ হিসেবেই পরিচিত, তিনিও মনোনয়ন চান। তবে এ দুজনের মধ্যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন ভাবনা থেকে বিকল্প হিসেবে এরশাদপুত্রকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে, জানিয়েছেন জাপার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বা জিএম কাদের আমাদের সময়কে বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হবে। জাপার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা সাদের মনোনয়নপ্রাপ্তির বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সাদ রাজনীতির ধারে-কাছেই নেই। বেশিরভাগ সময় ব্যবসায়িক কাজে থাকেন দেশের বাইরে।
তিনি আরও বলেন, দলের কোনো ফোরামে তিনি কখনো ছিলেন না। চেয়ারম্যানের জন্মদিন বা পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়া তাকে তেমন একটা দেখা যায়নি কখনো। রাজনৈতিক দৃশ্যপটে তো নয়ই। জাপার আরেক নেতা জানান, সাদকে পছন্দ করেন না হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি আত্মজীবনী ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ গ্রন্থেও সাদ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন, এরিকের প্রসঙ্গ লিখলেও।
যাকে নিয়ে এতো গুঞ্জন, এতো আলোচনা, সেই সাদ এরশাদের সঙ্গে আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। পারিবারিক সূত্রের খবর, তিনি এখন মালয়েশিয়ায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন