দেশের রাজনীতির মাঠে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত বিএনপির প্রতি একই সঙ্গে কোমল ও কঠোর দুরকম মনোভাবই দেখাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর দলটির যেসব নেতা যথারীতি শপথ নিয়েছেন, সংসদে আসছেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিপক্ষ হলেও তাদের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা হবে। আর দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং একাধিক মামলায় দ-াদেশ মাথায় নিয়ে বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি দলটিতে এ দুজনের কট্টর অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত যেসব নেতা রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও কঠোর নীতি অবলম্বন করবে সরকার। বিএনপিকে ক্ষেত্রবিশেষে এমন দুরকম চোখে দেখার ব্যাখ্যাও রয়েছে সরকারি দলের
শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে। তাদের যুক্তি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যে আচরণ করা হবে, দ-িত অপরাধীদের সঙ্গেও তেমন আচরণ করা কোনোভাবেই যথার্থ নয়।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ অবশ্য বলছেন, বিএনপিকে দুই চোখে দেখছে না সরকারি দল। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দ-িত অপরাধী। তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কী করার আছে? আর বিএনপির যেসব এমপি শপথ নিয়েছেন, তারা সংসদ সদস্য হিসেবে সব সুযোগ সুবিধা পাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, বিএনপি আর জিয়া পরিবারকে এক করে দেখছে না সরকার। বিএনপি একটি দল, অন্যদিকে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান আইনের চোখে দ-িত অপরাধী। কাজেই এ দুটো ক্ষেত্রে আচরণও ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। তাদের ভাষ্য, জিয়া পরিবার ছাড়া বিএনপিতে অনেক নেতাই আছেন, যারা ‘এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট’ ধারণ করেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার কারণে তাদের প্রতি আমাদের আচরণে সহনশীলতা বজায় থাকবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার অবশ্যই বিএনপির সেসব নেতার জন্য সব রকম ‘রাজনৈতিক স্পেস’ নিশ্চিত করবে; প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, জিয়া পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সমঝোতা হতে পারে না।
সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ের এসব নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির যেসব এমপি একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর শপথ নিয়েছেন, জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, তাদের যা প্রাপ্য তার কোনোকিছু থেকেই বঞ্চিত করবে না সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির সব এমপি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। ইতোমধ্যে তাদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারি দলের এমপিদের মতো বিএনপির এমপিরাও প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে তাদের এলাকার জন্য সহায়তাও পাবেন।
খালেদা জিয়ার কারামুক্তি প্রসঙ্গে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি নেত্রীর কারাদ- ও কারামুক্তি, দুটো বিষয়ই আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এতে সরকারের হাত নেই। প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার সরকারি চেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকার চায়, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং বিচারে তার যে শাস্তি হয়েছে তা কার্যকর করতে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক লন্ডন সফরকালীন সময়ে তারেক রহমানের অনুসারীদের আচরণে ক্ষুব্ধ সরকারি দলের নেতারা।
জানতে চাইলে বিএনপির নাম উল্লেখ না করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমাদের সময়কে বলেন, একটি দলের একটি পরিবার বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে, বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে নিয়ে, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে সব সময় অপরাজনীতি করেছে। আমরা চাই, সেই পরিবারের অপরাজনীতিটা নিপাত যাক। তিনি আরও বলেন, বিএনপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে যারা জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করছে, কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রশ্নে অপরাজনীতি করেন নাÑ আমরা তাদের প্রতি সহনশীল থাকব। কিন্তু জাতির আবেগের জায়গায় যারা হাত দেয় তাদের ব্যাপারে কোনো সহনশীলতা থাকবে না।
বগুড়ার উপনির্বাচনে প্রার্থী দেবে না আওয়ামী লীগ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের দুয়েকজন নেতা আরও জানিয়েছেন, আসন্ন বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনেও কোনো দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এই আসনটিতে কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দিয়েছিল আসনটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বগুড়া-৬ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওমর ইসলামকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ না নেওয়ায় শূন্য ঘোষণা করা হয় বগুড়া-৬ আসন। আগামী ২৪ জুন বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই উপনির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা জানান, এই আসনটিতে এবারও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চায় আওয়ামী লীগ। আগামী সোমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বগুড়া-৬ আসনের মনোনয়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন